দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্তিম হ্রদ রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানির ওপর নির্ভর করেই চলমান আছে কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
১৯৬০ সালে কর্ণফুলি নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করে এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল। গত বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় হ্রদের পানি বৃদ্ধি না পাওয়ার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
গত বেশ কিছু বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমেছে ৩০ মেগাওয়াটে। যেখানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট। হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় প্রায় ২১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে এই কেন্দ্রে। কম বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে রাঙ্গামাটি শহরজুড়ে।
রাতের বিভিন্ন সময়ের পাশাপাশি দিনের বেলায়ও দেখা দিচ্ছে লোডশেডিং। এতে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। শীতকালে লোডশেডিংয়ের অবস্থা দেখে সামনের গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পরিমাণ নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমেই চালু করা সম্ভব হয় যখন হ্রদে সর্বোচ্চ পরিমাণ পানি থাকে। এছাড়া বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা কমতে থাকে। এপ্রিল মাসের শুরুর দিক থেকে তীব্র দাবদাহের কারণে হ্রদের পানি হ্রাস পেতে থাকে খুব দ্রুত।
ফলে হ্রদের পানির ওপর নির্ভরশীল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। কিন্তু এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যতটুকু পানি হ্রদে থাকার কথা তা নেই। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর রয়েছে ৮২.৮৬ এমএসএল (মিনস সী লেভেল)। কিন্তু রুলকার্ভ অনুযায়ী বর্তমানে পানি থাকার কথা ৯৬.৩০ এমএসএল।
প্রায় ১৩.৪৪ ফুট পানি কম থাকার কারণে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্তৃপক্ষ পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি ইউনিট বন্ধ রেখেছে। শুধুমাত্র ২ নম্বর ইউনিটটি চালু রেখে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। হ্রদে সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল এবং সর্বনিম্ন ৬৮ এমএসএল।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ সূত্র জানায়, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু ১ ও ২ নং ইউনিটে ৬ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ বেশি উৎপাদন করা যায় বলে মোট সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট ধরা হয়। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৩৫ পয়সা।
+ There are no comments
Add yours