মাদারীপুরে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে লাখ-লাখ টাকা দিয়ে জীবন বাজি রেখে অবৈধভাবে ইউরোপ যাত্রা কোনোভাবেই থামছে না।
যুবকদেরকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। দালালরা বিদেশে নিয়ে আরও টাকা আদায় করতে তাদের ওপর চালাচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারে কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে আরও অর্থ।
লিবিয়া হয়ে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পথে কথিত গেম বা পাতা ভিসার মাধ্যমে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বহু কিশোর-যুবক। ‘লাশ’ হয়ে ফিরেছেন অনেকে। ট্রলার ডুবিতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে ভূমধ্যসাগরে। অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন ১০-১২ বছর ধরে। আজও কোনো সন্ধান পায়নি তাদের পরিবার।
মানবপাচারকারীরা বারবার রুট বদল করায় এবং তালিকায় তাদের আসল পরিচয় না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন। তবে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, আটক নাগরিকদের ফিরিয়ে এনে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, যারা বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত তাদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জনসচেতনতা বাড়ানো, দক্ষ জনবল তৈরি ও সরকারিভাবে বৈধ পথে বিদেশ গমনের ব্যবস্থা করছে সরকার।
এ লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপশি জনসচেতনতার জন্য বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা হয় সভা-সেমিনার। দালালচক্রকে প্রতিহত করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিদেশ যাওয়ার সব ধরনের ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাবে এমনটাই আশা সাধারণ জনগণের।
মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যয়নের মাধ্যমে দেশে মরদেহ কিংবা জীবিত ফেরৎ আনা হয়েছে অনেককে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাদারীপুর পৌরসভার মোহাম্মদ আলী, মস্তফাপুর ইউনিয়ন দেলোয়ার হোসেন, কাজী বশির, খোয়াজপুর ইউনিয়ন মৃত কার্ত্তিক সরকার, কুনিয়া ইউনিয়ন রুবেল মাতুব্বর, মফিজ বেগ, কালিকাপুর ইউনিয়ন সবুজ, পেয়ারপুর ইউনিয়ন মৃত নাফিস মুন্সী, মৃত মোশারেফ হোসেন। এছাড়াও ১২১ জন বন্দীকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে উপজেলা প্রশাসন। এ অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের জন্য দালাল চক্রের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।
তবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে বৈধ পথে বিদেশ গমন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি সমাধান বলে মনে করে। তাই মাদারীপুর জেলা ও সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষক কেন্দ্রে। পাশাপাশি জনসচেতনতার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে করা হচ্ছে জনসচেতনতামূলক সভা সেমিনার।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, অবৈধ মানবপাচার রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দালালদের বা মাফিয়ার হাতে কেউ আটকা থাকলে বিভিন্ন কারণে আমাদের জানায় না। তারা নিজেরাই আপোষ করে ফেলে। অভিযোগ যতগুলো পাওয়া গেছে তার উপরে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সকলকে সচেতন করতে হবে। বিদেশ গেলে বৈধ পথে যেতে হবে।
+ There are no comments
Add yours