নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় বিস্তৃত ১২১৭ একর আয়তনের বুড়িতিস্তা জলাধার পুন:খননের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ৬৬৭ একর জলাধার ৫টি প্যাকেজে প্রায় ৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পুন: খননের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুন: খনন কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারী-১। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিমলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. তবিবুল ইসলাম, জলঢাকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুর, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলায়েত হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবদুল হান্নান প্রধান।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১২১৭ একর জলাধারের মধ্যে প্রথম ধাপে ৬৬৭ একর জলাধার পুন: খনন করা হবে। জলাধারের পানি ব্যবহার করে ৫৫০০ একর (২২৩২ হেক্টর) জমিতে আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকদেরকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সেচের পানি সরবরাহ করা হবে। ফলে প্রতিবছর ২৬ হাজার মে. টন. ফসল উৎপাদিত হবে। যার বর্তমান সময়ে বাজার মূল্য প্রায় ৭২ কোটি টাকা।
এছাড়াও ভূপরিস্ত উর্বর পানি প্রতিটি ইরিগেশন পদ্ধতিতে ব্যবহার হওয়ায় প্রতিবছর অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন বাবদ ১২ কোটি টাকা জ্বালানি বাবদ ২.২০ কোটি টাকা এবং সার বাবদ প্রায় ১.৩০ কোটিসহ প্রতিবছর প্রায় ১৫.৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবদুল হান্নান প্রধান জানান, ১৯৬৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটি চলমান ছিল। ২০১০ সালে মৎস্য চাষের জন্য জলাধারটি উম্মুক্ত পদ্ধতিতে ইজারা প্রদান করা হয়। এতে সর্বোচ্চ কর দাতা হিসেবে তুষুকা রিসোর্সেচ নামক গাজীপুর ঢাকার একটি কোম্পানি মৎস্য চাষের ইজারা পায়।
স্থানীয় মৎস্য জীবিরা এতে বঞ্চিত হয়েছেন মর্মে স্থানীয় পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করলে মহামান্য হাইকোর্ট ইজারা কার্যক্রর্মে উপর স্থগিতাদের জারী করেন। এ প্রেরিক্ষতে সেসময় সেচ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আরো জানান, ওই ইজারা বাতিলের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৮ সালে রিট পিটিশনটি খারিজ করেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এবং পলি পরে জলাধারটির তলদেশ ভরাট হওয়ায় জলাধারটির পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। প্রকল্পটি পুনরায় চালুর জন্য সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে আমন মৌসুমে ১৫শ হেক্টর জমিতে সম্পুরক সেচ প্রদান করা হয়।
প্রকল্পটি পুরোদমে চালু ও ২২৩২ হেক্টর জমিতে নিরব্বিচ্ছিন্ন ভাবে পানি সরবরাহ করার নিমিত্তে তিস্তা সেচ প্রকল্পের সাথে সমন্বিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় ১৪৫২.৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় পুনবাসন ও সম্প্রসারণ নামক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেন। খনন কাজের উদ্বোধন শেষে নির্বাহী প্রকৌশলী পওর বিভাগ, নীলফামারী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকার সাংবাদিকদের জানান, ষাটের দশকে তৎকালীন সরকার বুড়িতিস্তা সেচ প্রকল্পটি তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের মডেল হিসেবে গ্রহণ করে। বুড়িতিস্ত নদীতে ব্যারেজ নির্মাণ করে পানির সমতা বৃদ্ধি করে প্রধান খাল ও শাখা খাল সমূহের মাধ্যমে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি আরো জানান, গ্রাভিটি সেচ পদ্ধতিতে মূলত আমন মৌসুমে প্রকল্প এলাকায় সম্পূরক সেচ প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি গৃহিত হয়েছিল।
বিদুর চন্দ্র রায় জয়, বিশেষ প্রতিনিধি
+ There are no comments
Add yours