মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

Estimated read time 1 min read
Ad1

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালির জীবনে নেমে আসে এক ভয়ংকর, নৃশংস ও বিভীষিকাময় অন্ধকার রাত। অন্য দিনের মতো সেটি স্বাভাবিক ছিল না। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাসের বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডব চালায়, সেদিন থেকে স্বাধীনতা কথা বাঙালির হয়ে যায়।

‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েই শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পথচলা। আজকের দিনটি তাই বাঙালি জাতির জন্য এক গৌরব ও অহংকারের। সবকিছু ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাওয়ার দিন। একই সঙ্গে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যেসব বাঙালি তাদের প্রাণ আত্মাহুতি দিয়েছেন, যেসব মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার দিন।

এই দিন উপলক্ষে সারা দেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারিভাবে এবং দলীয় ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি রেখেছে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও স্মরণে দিনটি পালিত হবে।

১৯৭১ সালের এই দিনে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু মাতৃভূমিকে মুক্ত করার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন।’

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের (তৎকালীন রেসকোর্স) বক্তব্যে বাঙালির মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা অর্জনে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা শুরু করে। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান- ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। ….চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। ’

বঙ্গবন্ধু এই ঘোষণা প্রথমে ইপিআর-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার সর্বস্তরের মানুষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির কাছে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন মহানস্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শেণিপেশার মানুষ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রোববার প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং জনসাধারণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours