সাবরীন জেরীন
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থানার উত্তর ফুলহাতা গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম খান নামে এক যুবকের ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বার) দুপুরে বাগেরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক মো. নূরে আলম এই রায় দেন।
মামলা সুত্রে জানা যায়,বাদী সাবিনা আক্তার ফুলহাতা বাজারে শহিদুল ইসলাম খানের খান ব্রাদার্স নামক মোবাইল মেরামতের দোকানে সাবিনা ফ্ল্যাক্সিলোড দিতে যাওয়ার এক পর্যায়ে শহিদুলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে শহিদুল বিবাহের প্রলোভন দিয়ে ওই নারীর সাথে অবৈধ ভাবে মেলামেশা করিতে চাইলে ওই নারী তাকে বিয়ে করে বৈধভাবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেলামেশা করার কথা বলে। পরবর্তীতে শহিদুল ইসলাম (১২ জুলাই ২০১৩ইং) তারিখে বিবাহের কথা বলে বাগেরহাটে একটি অপরিচিত বাসায় এনে ৩ টি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং তার সাথে বৈধ বিয়ে হয়েছে মর্মে তাকে বলে এবং পরবর্তীতে শহিদুলের বাড়ীতে এনে মৌলবী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে একটি কাবিন নামার কপি দিয়ে বলে সাবিনার সাথে বিয়ে বৈধভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
পরবর্তীতে কয়েক মাস পরে সাবিনার আত্মীয় স্বজন ঘটনাটি জানতে পেরে বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চাইলে সাবিনা তার কাছে থাকা কাগজাদী তার পরিবারকে দেখালে আত্মীয় স্বজন ওই কাগজ নিয়ে কাজীর নিকট গিয়ে জানতে চাইলে কাজী বলে এই নম্বরে সাবিনা এবং শহিদুলের বিয়ে রেজিষ্ট্রি হয় নাই এবং তাদের কে বুদ্ধি দেয় যে যেহেতু শহিদুল একটি বিয়ের কাগজ তৈরী করেছে সেহেতু তাকে তালাক দিলে এই সমস্যা দূর হবে।
কাজীর কথা মত সাবিনা শহিদুলকে তালাক দেয় এবং অন্য জায়গায় তাকে তার আতী¡য়রা বিয়ে দেয়।
তালাক নামা হাতে পেয়ে বিয়ের খবর শোনার পর শহিদুল ইসলাম সাবিনার উপর ভিষনভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং পূনরায় যদি শহিদুলের সাথে সংসার না করে তবে সে তার নিকট রক্ষিত সাবিনার নগ্ন ছবিসহ সবকিছু তার আত্মীয় স্বজন ও স্কুলের শিক্ষকদের দেবে বলে। পরবর্তীতে শহিদুলের কথায় সাবিনা কাজ না করলে তার স্বামীর কাছে ও আত্মীয় স্বজনের কাছে বিভিন্ন উপায়ে নগ্ন ছবি গুলো পাঠায়। এ ঘটনাটি চারিদিকে প্রকাশ করে দেয় এবং হুমকি দিয়ে বলে তার কথা না শুনলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। তখন সাবিনা কোন উপায় না পেয়ে থানায় একটি মামলা করে।
উল্লেখ্য যে,মামলা নং-নারী ও শিশু-৯১৭/১৮ অত্র মামলার আসামী মো: শহিদুল ইসলাম খান, পিতা- আ: রহমান খান এর বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর ৯(১) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ বছর সশ্রম কারাদন্ড, পনোর্গ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইন,২০১২ এর ৮(১) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস স¤্রম কারাদন্ড,পনোর্গ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইন,২০১২ এর ৮(২) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাস সশ্রম কারাদন্ড,পনোর্গ্রাফী নিয়ন্ত্রন আইন,২০১২ এর ৮(৩) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাস সশ্রম কারাদন্ড এবং দন্ড বিধির ৪৯৬ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাকে ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাস সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। সবগুলো শাস্তি একসাথে চলবে।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এস,আই সরদার ইকবাল হোসেন ও আসামীপক্ষের আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম বাবু এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী-রণজিৎ কুমার মন্ডল, এ,পি,পি।
+ There are no comments
Add yours