ড. ইউনূসের আয়কর রিটার্নের মামলা উঠছে হাইকোর্টে

Estimated read time 1 min read
Ad1

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ১১শ কোটি টাকার আয়কর রিটার্নের মামলা উঠছে হাইকোর্টে।

বুধবার (৫ এপ্রির) রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ দিন ধার্য করেছেন।

এর আগে, নোবেল বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদের ব্যক্তিগত এবং তার প্রতিষ্ঠিত ৯টি প্রতিষ্ঠানের কর সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে এনবিআরের কাছে চিঠি দিয়েছিল দুদক। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এনবিআরের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট সার্কেল এবং জরিপ দফতরকে মৌখিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল।

এনবিআরে পাঠানো দুদকের চিঠি থেকে জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে দলনেতা করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ৯টি প্রতিষ্ঠানের কর সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে এনবিআরের কর অঞ্চল ১৪-এর আওতাধীন সার্কেল ২৮৭-এর উপকর কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে এ কমিটি।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ কল্যাণ ট্রাস্ট, গ্রামীণ নিটওয়্যার, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিস এবং গ্রামীণ ফ্যাশন অ্যান্ড ফেব্রিকসের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। আর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট এবং ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্টের দানকর সম্পর্কিত তথ্য চেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি।

সূত্র জানায়, এনবিআরের কর অঞ্চল ১৪ এর সার্কেল ২৮৭ মূলত কোম্পানির আয়কর সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব পালন করে। উল্লিখিত কোম্পানিগুলো এ সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে। এ কারণেই দুদক থেকে সরাসরি এ সার্কেলের উপকমিশনারকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

কর অঞ্চল-১৪ থেকে দুদকে পাঠানো নথির তথ্য অনুযায়ী, দানকর সংক্রান্ত পাওনা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে কর অঞ্চল-১৪ এর বিরুদ্ধে ড. ইউনূস নিজে বাদী হয়ে তিনটি রিট করেন। মামলাগুলো হলো যথাক্রমে—১০৮/২০১৫, ১০৯/২০১৫ এবং ১১০/২০১৫। এ তিন রিটে জড়িত আয়করের পরিমাণ ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা।

আয়কর বিভাগ অডিটের নোটিশ করার পর ২০০৮ সালে এনবিআরের বিরুদ্ধে রিট মামলা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম। এতে বিবাদী করা হয়েছে এনবিআরকে। রিট নম্বর-৯৭১১/২০০৮। এ ছাড়া গ্রামীণ কল্যাণের কাছে আয়কর দাবি করার পর ২০১৭ সালে ৬টি রিট মামলা হয় আয়কর বিভাগের বিরুদ্ধে; এক্ষেত্রে বিবাদী করা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এর সঙ্গে জড়িত সরকারের রাজস্বের পরিমাণ ৬৭১ কোটি ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৩২২ টাকা। আর গ্রামীণ শক্তি রিট মামলা দায়ের করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। এর সঙ্গে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ৫৭ লাখ ২৫ হাজার ১৯০ টাকা। ড. ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের পাওনা আয়কর আদায়ে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

জানা গেছে, কর অঞ্চল-১৪-এর বিরুদ্ধে দুটি রিট মামলা করেছে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট। এর সঙ্গে জড়িত সরকারের রাজস্বের পরিমাণ ২০৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩৭ টাকা। এই দুই রিটের বিপরীতে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে আগামী ২৯ আগস্ট পর্যন্ত। আর মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে এসব আয়কর পাওনা বলে দাবিও করতে পারছে না এনবিআর।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ টেলিকম শুধু এনবিআর নয়, কর অঞ্চল-১৪-এর বিরুদ্ধেও রিট মামলা করে ২০২০ সালে। এ মামলায় জড়িয়ে আছে ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া গ্রামীণ কল্যাণের আরও দুটি রিটে আটকে আছে ১৫৯ কোটি ৬৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, গ্রামীণ ট্রাস্টের তিনটি রিটে আটকে আছে ১০ কোটি ৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। আর গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশনের চারটি রিটে আটকে আছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ২৩ হাজার টাকার রাজস্ব। এ চারটি রিট মামলা করা হয় ২০০৪ সালে। আর গ্রামীণ উদ্যোগের একটি রিটে আটকে আছে ৬৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা, গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশনের চারটি রিটে জড়িত ১ কোটি ৮২ লাখ ১৮ হাজার টাকা, গ্রামীণ সামগ্রীর রিটে ৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা, গ্রামীণ ব্যাংকের রিটে জড়িত রাজস্ব ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা, গ্রামীণ ডানোন ফুডে ১৪ হাজার টাকা, গ্রামীণ বাইটেকে ৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা। আরকর অঞ্চল-১৪-এর বিরুদ্ধে করা গ্রামীণ শক্তির ৬টি রিটে আটকে আছে সরকারের ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসের রিটে আটকে আছে ১৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, গ্রামীণ ভেউলিয়া ওয়াটারে আটকে আছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক বরোয়ার্স ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের দুটি রিটে আটকে আছে ১৯ কোটি ৭৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিজের করা তিনটি রিট মামলায় আটকে আছে প্রায় ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকার রাজস্ব।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours