এস. এম. তারেক, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি :
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওর কলেজ গেইট সংলগ্ন মেহেরঘোনায় গত ৪ ডিসেম্বর (শুক্রবার) অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ২ শ্রমিক বুধবার রাতে (৯ ডিসেম্বর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হতভাগা শ্রমিকদ্বয় হলেন জালালাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ লরাবাক গ্রামের রিক্সা চালক নুরুল আজিমের পুত্র নজরুল ইসলাম (২৪) এবং অপরজন রামু উপজেলাধীন রশিদনগর ইউনিয়নের পাহাড়তলী গ্রামের মোঃ ইদ্রিসের পুত্র জামাল উদ্দিন (২৫)।
নিহত জামাল উদ্দিন ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং ৩ সন্তানের জনক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন নজরুল ইসলাম এবং জামাল উদ্দিনের মৃত্যু হয় যথাক্রমে রাত ৮ টা ও একইদিন রাত সাড়ে ১০ টা’য়। হাসপাতালে অবস্থানরত মৃত নজরুলের চাচা জয়নাল আবেদীন শ্রমিকদ্বয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আজ ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১ টা’য় চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ থানার এসআই আশরাফুল কবির চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে নজরুলের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেন এবং চমেকে নজরুল ইসলামের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
মৃত নজরুলের চাচা জয়নাল আরো জানান, লোভী তৈয়ব এবং ছৈয়দ গংয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রজুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নজরুলের গরীব পিতা রিক্সা চালক নুরুল আজিম ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন এবং ছেলে হত্যার বিচার দাবী করেন। অপরদিকে জালালাবাদের ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ ঘটনার মুল হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান। এদিকে ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার গুদামের মালিক আবু ছৈয়দ ও আবু তৈয়বের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি কোন ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ ডিসেম্বর ঈদগাঁও’তে অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার ক্রসফিলিং ডিপোতে গ্যাস ক্রসফিলিংকালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।এতে ওই গো-ডাউনে মৃত নজরুল এবং জামাল শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সূত্র জানায়, ঘটনার দিন সকাল ৬ টায় গুদাম মালিক আবু ছৈয়দ ওই দুই শ্রমিককে দিয়ে গ্যাস ক্রসফিলিং করাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে ভয়াবহ গ্যাস সিলিন্ডারের ভয়াবহ বিস্ফোরন ঘটে এবং অগ্নিদদ্ধ হয়ে নজরুল এবং জামাল গুরুতর আহন হন। আহতদের প্রথমে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয় সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে চমেকের বার্ণ ইউনিটে তাদের স্থানান্তর করা হয়। পরে টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উভয়ের মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে ওই দুই সহোদর নিয়মনীতি ও পরিবেশের তোয়াক্কা না করে অতিমুনাফার লোভে অবৈধ গ্যাসসিলিন্ডার ক্রসফিলিং করে আসছিল এবং ওই সিলিন্ডার বাজারজাতকরণের একটি সংঘবদ্ধচক্র গড়ে তুলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, তৈয়ব ও ছৈয়দ অল্পদিনেই কোটি টাকার মালিক।
আইনের ফাঁক ফোকর, মাঠপ্রশাসনের শৈথিল্য ও স্থানীয় নেতাদের মাসোহারা দিয়ে বশ করে বেপরোয়া হয়ে উঠে দু’ভাই প্রশাসনের নাকের ডগায় দেশের প্রচলিত আইন, পরিবেশ ও জননিরাপত্তার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র,বিষ্ফোরক লাইসেন্স,অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছাড়াই দিনের পর দিন লোকঠকানো ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গোডাউনে ছিলনা যথাযথ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পরিবেশ অদিদপ্তরের ছাড়পত্র,বনবিভাগের অনুমতিপত্র এবং অনুমোদনের যথাযথ কাগজপত্র। সচেতন মহল এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।
+ There are no comments
Add yours