উপকূলীয় সন্দ্বীপ থেকে একমাত্র বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের গ্রাম উড়িরচরে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করার জন্য কোনো প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ নেই।
যার কারণে বছরের পর বছর ছোট- বড় সকল ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এ অঞ্চলের জনসাধারণের জানমাল ও গবাদিপশু(গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল) ও মাঠের ফসল মারাত্মক ভাবে ক্ষয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
সিডর, আইলা, মহসিন, বুলবুল, আম্পান ও ইয়াসের মতো ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত আঘাত মোকাবিলা করতে হয়েছে উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচরের বাসিন্দাদের । ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয় এখানকার মানুষদের। প্রতি বছর যখনই ঝড়-বন্যায় নদীর পানি বৃদ্ধি পায় তখন পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো ইউনিয়নের মানুষ। ভেসে যায় মৎস্য ঘের, ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি।
আপাতত ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত থেকে রক্ষা পেলেও দারুন শংকিত এ উপকূলীয় এই ইউনিয়নের মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের পাশাপাশি সাগরপাড়ের মানুষের কাছে জোয়ার-ভাটা নিত্য ঘটনা, সাগরপাড়ের সুরক্ষা নেই। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান না থাকায় জোয়ারের চাপে পানি ঢুকে প্লাবিত হয় উড়িরচর ইউনিয়নের জনপদ।
ফলে বর্ষা মৌসুমে শত শত বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে। অথচ নাগরিকদের সুরক্ষায় এসব উকূূলীয় এলাকায় উঁচু বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা থাকলেও এ ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণে নজর নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতি মন্ত্রী কর্ণেল জাহিদ ফারুক শামিম সন্দ্বীপ উপজেলার উড়িরচর ও সারিকাইত ইউনিয়নের সফর করে উড়িরচর ৮ কিলোমিটার ব্লক বেড়িবাঁধ করা ঘোষণা দিয়েছিলেন।
মন্ত্রীর সে ঘোষণার ৩০ মাস পার হলেও উড়িরচর ইউনিয়নে কোন রকমের বেড়িবাঁধ সংস্কার বা ব্লক বেড়িবাঁধ করা হয় নি। বর্তমানে উড়িরচর ইউনিয়নে ভাঙ্গন এত বেশি তীব্র যার কারনে দিশেহারা হয়ে পড়ছে এ ইউনিয়নের ৪০ হাজার বাসিন্দা। যে কোন প্রকৃতিক দুর্যোগ বা জলোচ্ছ্বাস আসলে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতংক।
১৯৮৫ সালে উড়িরচর ইউনিয়নের ভয়াবহ বন্য জলোচ্ছ্বাসে অনেক মানুষ প্রান হারিয়েছিল তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উড়িরচর এসে মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। যা মানুষ এখনো ভোলেনি অবহেলিত এই জনপদের মানুষগুলো। ঘূর্ণিঝড় মোখার খবরে এ এলাকা পরিদর্শন করতে গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সংবাদে আতংক এখানকার মানুষের নিত্য সঙ্গী।
এ বিষয়ে উড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা কলোনি বাজার ব্যাবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন পারভেজ (৪০) বলেন ঝড়-জলোচ্ছ্বাস আমাদের নিত্য সঙ্গী, কোন বেড়িবাঁধ নেই, বিগত ৩০ বছরে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আমাদেরকে ছয়বার ঠিকানা পরিবর্তন করতে হয়েছে। সরকারের কাছে দ্রুত ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী করছি।
এ ইউনিয়নের বাসিন্দা চট্টগ্রাম কলেজের মাষ্টার্সের ছাত্র মিলাদ দ্বীপরাজ বলেন উড়িরচর ইউনিয়নের মত মানবিক সুবিধা বঞ্চিত ইউনিয়ন বাংলাদেশের আর একটি আছে কিনা আমার জানা নেই। গত দুই দশকে এ ইউনিয়নে যে পরিমাণ নদী ভাঙ্গন তাতে মনে হয় দেখার কেউ নেই। সব সময় শুধু প্রতিশ্রুতি শুনি, কিন্তু ভাঙন মোকাবিলার কোন কাজ বাস্তবায়ন দেখেনি, আমরা উড়িরচর ইউনিয়নের টেকসই ব্লক বেড়িবাঁধ করার জন্য সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
উড়িরচর জুনিয়র স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসান বলেন ব্লক বেড়িবাঁধ না থাকায় এ ইউনিয়নের ভাঙ্গন এত বেশি যার কারণে আমাদের শিক্ষার্থী সংকট থাকতে হচ্ছে সব সময়। মানুষ বাধ্য হয়ে এ ইউনিয়ন থেকে অন্য স্হানে পাড়ি জমাচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব ডিবিসন ইঞ্জিনিয়ার (SED) সন্দ্বীপ আনিস হায়দার খান বলেন এ প্রকল্পটি অনেক বড় বিধায় আমাদের একটু সময় নিতে হচ্ছে, আমরা পরিক্ষা নিরিক্ষা করে উবর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে কাগজ পত্র পাঠিয়েছি।
মিলাদ মুদ্দাচ্ছির, সন্দ্বীপ
+ There are no comments
Add yours