ঝালকাঠির রাজাপুর সদর ইউনিয়নের চাড়াখালি গ্রামে কিশোরী নববধূ বিয়ের তিনদিন আগে ঘটকের ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
অভিযুক্ত ও তার স্বজনরা স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকার বিনময়ে এ ঘটনা রফাদফা করে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী সোমবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করে ধর্ষকের বিচার ও গর্ভের সন্তান রক্ষা এবং তার পিতৃ পরিচয়ের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন।
বর্তমানে ১৪ বছরের ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া ওই কিশোরী ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ছাড়তে হয়েছে স্বামীর ঘর। অভিযুক্ত ঘটক ধর্ষকের নাম হালিম সিকদার (৪৫)। সে উপজেলার বড় কৈবর্তখালি গ্রামের মৃত আজিজ সিকদারের ছেলে। দুই সন্তানের জনক এই ধর্ষক পেশায় গাছ ব্যবসার পাশপাশি এলাকায় ঘটকালী করে।
ভূক্তভোগী ওই ছাত্রী উপজেলার মধ্য ফুলুহার মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। সে নানা বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতো। কিশোরী ওই নববধূ জানান, নানার ঘরে কেহ না থাকার সুযোগে বিয়ের ৩ দিন আগে গত ২১ এপ্রিল ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ঘটক হালিম। এরপরে জোর করে ধর্ষণ করে কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখায়।
কিন্তু ঘটনার দিনই নানা-নানী সহ স্বজনদের জানালে তারা আমলে আমলে না নিয়ে চুপ থাকতে বলে। ধর্ষণের শিকার হওয়ার তিনদিন পর ওই ঘটকের মাধ্যমে ঠিক হওয়া এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে হয় ওই কিশোরীর। বিয়ের বয়স না হওয়ায় নোটারী পাবলিক করে উপজেলার ছোট কৈবর্তখালি গ্রামের মো. হারুন হাওলাদারের ছেলে নুরুজ্জামানের সাথে এ বছরের ২৪ এপ্রিল সামাজিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করে ওই দিনই স্বামী বাড়িতে তুলে দেয়া হয়।
বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে অন্তঃসত্তা হওয়ার বিষয়টি ধরা পরলে স্বামীর মারধর ও পরিবারের চাপে পরে হালিম কর্তৃক ধর্ষণের বিষয়টি স্বামী ও তার স্বজনদের জানাতে বাধ্য হন ওই নববধূ। এরপর নববধূর নানাসহ বাড়ির লোকজন গিয়ে ওই নববধূকে বাড়িতে এনে উপজেলার শহরের ২টি ক্লিনিকে ১৫ জুন ও ১৮ জুন আল্ট্রাসনোগ্রাম করে। তাতে দেখা যায় গর্ভের বাচ্চার বয়স ৮ সপ্তাহ ৪ দিন।
পরে ধর্ষনের কথা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বললে সোমবার সকালে স্থানীয় একটি মহল অভিযুক্ত হালিম সিকদারসহ উভয় পক্ষকে ডেকে পাঠায়। উভয় পক্ষ তাদের কাছে গেলে নববধূকে এবং তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে ২ লাখ টাকায় রফাদফার চেষ্টা করলে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়।
বর্তমানে লোকলজ্জা ও আত্মীস্বজনের সমঝোতার চাপে বাধ্য হয়ে সোমবার দুপুরে ওই নববধূ উপজেলা শহরের এক আত্মীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। এছাড়াও এই ভুক্তভোগী কিশোরী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মহিলা অধিদপ্তর ও ব্র্যাকসহ সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন। তবে এই বিষয়ে কিশোরীর স্বামী নুরুজ্জামান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় ইদ্রিস ফরাজি জানান, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ তার কাছে গিয়েছিলো। সব শুনে তিনি এর শালিশ মিমাংসা করা সম্ভব না বলে জানিয়ে দেয়। দোষী ব্যক্তির আইনের মাধ্যমে বিচার হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি কোন শালিশ বা সমঝোতার চেষ্টা করেননি বলেও জানান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত হালিম সিকদারের বক্তব্যের জন্য মোবাইলে কল দিলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নিজে দোষী না দাবি করে সামানা সামনি কথা বলবেন বলে জানান।
পরবর্তীতে বিস্তারিত জানতে তাকে কল দিলে তিনি কল রিসিভ না করে নম্বর বন্ধ করে রাখেন। রাজাপুর থানার ওসি পুলক চন্দ্র রায় জানান, এ বিষয়ে কেহ কোন অভিযোগ দেয়নি বা জানায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমির হোসেন, ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি
+ There are no comments
Add yours