গঠনমূলক সমালোচনা হচ্ছে‘বিউটি অব ডেমোক্রেসি’ : তথ্যমন্ত্রী

Estimated read time 1 min read
Ad1

খবর বাংলা ডেস্ক

আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, টেলিভিশনের টক-শোগুলো শুনুন, সেখানে সরকারকে কি ভাষায় সমালোচনা করা হয়। আমরা মনে করি এই সমালোচনা থাকতে হবে। সমালোচনা না থাকলে গণতন্ত্র নষ্ট হয়, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। গঠনমূলক সমালোচনা হচ্ছে বিউটি অব ডেমোক্রেসি এবং সেই সমালোচনাকে সমাদৃত করার মানসিকতা থাকতে হয়।

তিনি বলেন, এখন দেখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল বেলা কড়া ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেন, আবার সেটার সাথে প্রতিযোগিতা করে দুপুরে রিজভী আহমেদ আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করে আরো কড়া ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেন।

পাশাপাশি প্রেস ক্লাবে গিয়ে গয়েশ^র চন্দ্র রায় কিংবা অন্য কেউ আরেকবার বক্তৃতা দিয়ে বলেন, আমাদের কথা বলার কোন অধিকার নাই। বিএনপি নেতারা সারাদিন সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে সন্ধ্যায় বলেন আমাদের কথা বলার অধিকার নেই।

আজ মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ন সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান ও কলিম সরওয়ার, সহসভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, বিএফইউজে’র সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতি লালন করেন। আমি যখন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম, তখন যেই পত্রিকা ব্যঙ্গ করে আমার কার্টুন ছাপিয়েছিল প্রথম পাতায়, সেই পত্রিকাকে জাতীয় পরিবেশ পদক দেয়ার জন্য আমি নিজেই নাম প্রস্তাব করেছিলাম এবং তারা পেয়েছিল। কারণ আমরা মনে করি দায়িত্বে থাকলে সমালোচনা হবে এবং সেই সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের থাকতে হয়। না হয় বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে না।

তিনি বলেন, অনেক সমালোচনা হচ্ছে, রাত বারটার পরে যদি টক-শো শোনেন, সবগুলো টক-শো যদি কারো উপসংহারে আসে তাহলে মনে হবে দেশে কোন কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতাটা হচ্ছে ব্লুমবার্গ করোনা নিয়ে যেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে বলছে করোনা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবগুলো দেশের উপরে বাংলাদেশের অবস্থান এবং পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ২০ তম।

জনবহুল বাংলাদেশে মানুষের ঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ, মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ পৃথিবীতে সর্বনিম্ন। যখন ভালো কাজের প্রশংসা হয় না অহেতুক সমালোচনা হয়, তখন কিন্তু যারা ভালো কাজ করেন তারা হতাশ হন।

তখন মানুষ ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহিত হন না। অবশ্যই সমালোচনা হবে, সমালোচনা থাকবে, এটির পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসাও দরকার। না হয় রাষ্ট্র সমাজ এগুবে না- বলেন তথ্যমন্ত্রী।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। রাষ্ট্রের যদি কোন একটি স্তম্ভ সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে রাষ্ট্রের ভিত নষ্ট হয়ে যায়। এটি মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের সাথে যুক্তরা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন এবং স্বাচ্ছন্দে জীবন-যাপন করতে পারেন সেক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন। তিনি বলেন, করোনাকালে সবকিছু যখন বন্ধ হয়ে গেছে তখন সাংবাদিকদের কলম বন্ধ হয়নি।

আমরা লক্ষ্য করেছি দেশে কিংবা পৃথিবীতে যখন কোন সঙ্কটময় পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন একটি মহল সেটিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে সমাজের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করা যায়, ভয়ভীতির সঞ্চার করা যায়, গুজব রটিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা যায় সেজন্য ওঁৎ পেতে থাকে।

এই করোনাকালের শুরুতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু যাতে গুজব রটাতে না পারে ও মিথ্যা সংবাদের মাধ্যমে সমাজে অস্থিরতা তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো অত্যন্ত যত্নশীল ছিল এবং কঠোরভাবে কাজ করেছে।

এ কারণে এই করোনাকালে গুজব কিংবা মিথ্যা সংবাদ খুব বেশি কাজে আসেনি। এজন্য গণমাধ্যমের সাথে যুক্তদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তারা বলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর ২৮ তম অর্থনীতির দেশ, ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর ২৫ তম অর্থনীতির দেশ।

পৃথিবীর মাত্র ২২টি দেশ করোনাকালে পজিটিভ জিডিপি গ্রোথ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিকে। এই পরিসংখ্যানগুলো জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। কারণ আশাহীন জাতি এগুতে পারে না। কোন জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সেই জাতির মধ্যে আশা থাকতে হয়। জাতিকে আশান্বিত করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব। দেশ সম্পর্কে ভালো রিপোর্টিং হয়, পৃথিবীতে পরিবেশিত হয়। সেগুলো জনগণকে জানানো আমাদের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, দেশকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার এবং সেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। স্বাধিকার আদায়, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও দেশ গঠনে ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা যেভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও সাংবাদিকরা বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে যদি আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ রচনা করতে চাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখানেও সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সব মানুষের কল্যাণেই চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সব দলমতের মানুষের প্রয়োজনে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে, এটি থাকা বাঞ্চনীয়।

প্রত্যেক মানুষের মধ্যে রাজনীতি থাকতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক দলাদলির ছোঁয়া চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে লাগেনি। এজন্য আমি প্রেস ক্লাবের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সব জায়গায় রাজনীতিকে এনে সেখানে নিজেদের মধ্যে প্রকট বিভাজন তৈরী করাও সমীচিন নয়। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে আমার বহু দিনের জানাশোনা এবং হৃদয়ের সম্পর্ক। আমার হৃদয়ে আপনাদের স্থান সবসময় ছিল এবং থাকবে, আমি আশা করবো আপনাদের হৃদয়েও আমাকে স্থান দেবেন- সেই আবেদনটুকু রাখলাম-বলেন তথ্যমন্ত্রী।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর(বৃহস্পতিবার)। উক্ত নির্বাচনে প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্যদের ভোটে প্রতি দুই বছর অন্তর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বক্তারা বলেন সম্প্রতি করোনাকালে চট্টগ্রামের সাংবাদিকবৃন্দরা অনেক কষ্ট করে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছেন। সেকারণে সরকার ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সহযোগিতা এবং প্রণোদনা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে তারা সরকারের কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং সাংবাদিকবান্ধব সহযোগিতা কামনা করেন। পিআইডি।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours