চট্টগ্রাম জেলায় ১৯২৯ সালে ৯৫.১০ বর্গমাইল জুড়ে হাটহাজারী থানা সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও হাটহাজারী মাদ্রাসা এখানে অবস্হিত বিধায় সারা দেশে এই উপজেলা বেশ আলোচিত ও পরিচিত।
এক পাশে হালদা নদী অন্য পাশে পাহাড় এই দু’য়ের মাঝখানে সৌন্দর্যের নীলা ভূমি হাটহাজারী। বর্তমানে ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ১টি পৌরসভা নিয়ে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ গঠিত। স্বাধীনতার পর আজ অবধি ১১বার জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে শুধু ১৯৭৩ সালে ৭ই মার্চ নির্বাচনে এম এ ওহাব নৌকা প্রতিকে আওয়ামী লীগের সাংসদ নির্বাচিত হন।
বর্তমান সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ১৯৭৯ সালে বিএনপি হতে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি হতে ২০০৮, ২০১৪,এবং ২০১৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে মোট ৬বার সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় পার্টি সরকারের সেচ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রী’র দায়িত্ব পালন করেন।
মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম বিএনপি’র প্রার্থী হয়ে পরপর চারবার সাংসদ নির্বাচিত হন।তিনি চারদলীয় জোট সরকারের হুইপ ছিলেন। স্বাধীনতার স্বপক্ষে র শক্তির ব্যাপক জনসমর্থন ও আওয়ামী লীগের বিশাল কর্মি বাহিনী ও সমর্থক রয়েছে হাটহাজারী উপজেলায়।কিন্তু আওয়ামী লীগ মহাজোট গঠন করায় নিজেদের অনেক যোগ্য দক্ষ ও জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্বেও জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগিতে তাদের হেভিওয়েট প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ কে বিগত দিনের সব নির্বাচনে এই আসন ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
তাই প্রতিবার নির্বাচন আসলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্ধী এই আসনে দেওয়ার জন্য তৃণমূলের কর্মিরা মানববন্ধন মিটিং মিছিল সহ ব্যাপক শোডাউন করে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও নীতি নির্ধারনী ফোরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন।আন্দোলন সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইউনুচ গনি চৌধুরী কে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হলে কর্মিদের মাঝে তুমুল উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহাজোটের প্রার্থী কে সমর্থন করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
যা পরবর্তীতে তৃণমূলের সমর্থকদের হতাশ করে। হাটহাজারী আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতারা খুবই দৃঢ়চিত্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় যেভাবে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যায় তার তুলনায় হাটহাজারীতে আশানুরূপ হয় নাই।উন্নয়ন হয়েছে তবে পাশ্ববর্তী উপজেলায় যেভাবে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে তার মাপকাঠিতে হাটহাজারীর উন্নয়ন অনেক অনেক কম।তাদের দাবী আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ না থাকায় আমরা কাংখিত উন্নয়ন হতে বঞ্চিত হয়েছি।
এই আসনে দীর্ঘ দিন জাতীয় পার্টির সাংসদ থাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যে ও তাকে ঘিরে একটি উপদল সৃষ্টি হয়েছে।যার কারনে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ভাবে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ও সাংসদ অন্য দলের হওয়ায় সরকার দলীয় নেতা কর্মিরা স্হানীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড সহ নানা ইস্যুতে চরমভাবে উপেক্ষিত হয়ে আসছেন ফলে জাতীয় পার্টিকে ঘিরে চরম সংকটে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি ছাড়া ব্যাপক জনসমর্থন ও কর্মি বাহিনী এবং নিরব ভোট ব্যাংক রয়েছে হাটহাজারীতে বিএনপি’র।আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী অনেক থাকলেও যার নাম মাঠে ময়দানে জোরেশোরে শুনা যাচ্ছে তিনি হলেন সাবেক মন্ত্রী মীর নাছিরের সন্তান মীর হেলাল। দলের নেতা ও তৃণমূলের কর্মিরা বলেন মীর হেলাল দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে সব সময় নিজেকে দলের জন্য উজাড় করে দিয়েছেন।
তিনি একজন রাজপথে জিয়ার সাহসী সৈনিক। এছাড়া ও তাহার সবচেয়ে বড় গুণ হল তিনি একজন কর্মিবান্ধব নেতা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে যারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্টানে উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মিদের ও সাধারণ ভোটারের মন জয় করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ইউনুচ গনি চৌধুরী।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতা কর্মিরা বলেন আমাদের দল বিএনপির সাথে জোটগত নির্বাচন করলে দলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অবঃ সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক হাটহাজারীতে জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন। বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী।আওয়ামী লীগ যদি জোটগত ভাবে নির্বাচন করেন তাহলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আবারো মহাজোটর প্রার্থী হবেন এটা প্রায়ই নিশ্চিত মনে করেন জাতীয় পার্টির নেতা কর্মিরা।
কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা কর্মিরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।কোন ভাবেই ছাড় দিতে রাজি নেই। ইতিমধ্যে ঈদ পূর্নমিলন ও কর্মিসভার ব্যানারে ব্যাপক শোড়াউন করে মিটিং করে যাচ্ছেন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী এম এ সালাম। তিনি তার বিভিন্ন বক্তব্যে বলেছেন আওয়ামী লীগের একজন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকে ও নৌকা প্রতীক দিলে আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে দলের স্বার্থে তাকে বিজয়ী করব।উপজেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড নেতাদের অভিমত আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এই আসনে দেওয়া না হয় তাহলে দল বড় ধরনের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়তে পারে।
এম আনোয়ার আজম
+ There are no comments
Add yours