বাংলাদেশে আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের এই নির্বাচন নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারত ইতিমধ্যে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।
রোববার (২০ আগস্ট) বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু।
সাংবাদিক প্রণয় শর্মার ওই প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনা হেরে যান, তাহলে বাংলাদেশ দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যদি ক্ষমতা হারায়, তাহলে এতে ‘চিন্তিত’ হয়ে পড়বে ভারত। সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহিংসতাও বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রণয় শর্মা লিখেছেন, প্রতিবেশীদের মধ্যে যে ভারতবিরোধী মনোভাব আছে সেখানে শেখ হাসিনার সরকার খুব সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে নির্ভরশীল ও ঘনিষ্ঠ মিত্র। তবে যদিও ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বিগ পাওয়ার’ হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এই অবস্থানে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন। আর বছর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন তাদের অবস্থান শক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে এরপর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৌড়ঝাঁপ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে এবং জানুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচন নিশ্চিতে চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টাকারীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র্যাবের বিরুদ্ধে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। এরমাধ্যমে তিনি নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার আয়োজিত গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাননি। যেখানে ভারত-পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এছাড়া গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন যে তাকে উপেক্ষা করেছিল সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন, বাইডেন বাংলাদেশের গণ্তন্ত্রকে রক্ষা নয়, ধ্বংস করতে কাজ করছেন। একবার সংসদে তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যে কোনো দেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি মুসলিম দেশ হয়।’
লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, ‘ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতাবিরোধী পরিস্থিতিতে পড়েছেন এবং বিএনপি রাজনৈতিক মোমেন্টাম পাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হয়, তাহলে এই চ্যালেঞ্জটি ভারতের জন্য আরও কঠিন হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (ব্রি) যোগ দেওয়ার পর বেইজিংয়ের কাছ থেকে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে। এছাড়া চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যবসায়িক বন্ধুও। বর্তমানে সিনো-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার আর ভারতের সঙ্গে ১৮ বিলিয়ন ডলার।
আরেকটি তথ্য হলো— ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ২ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র কিনেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনেছে মাত্র ১২৩ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র।
+ There are no comments
Add yours