জলাবদ্ধতা নিরসন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও কালুরঘাট রেলকাম সড়ক সেতু নির্মাণের দাবীতে স্মারক লিপি প্রদান কালে বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ। অবহেলা ও সেচ্ছাচারিতা ও সমন্বয়হীনতার কারনে অরক্ষিত নালা ও ড্রেনে পড়ে নিত্য প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে। যার ফলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার জলাবদ্ধতা নিরসন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও কালুরঘাট রেলকাম সড়ক সেতু নির্মাণের দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামের মাধ্যমে বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির কার্যকরী পরিষদের চেয়ারম্যান ডাক্তার শেখ শফিউল আজম ও মহাসচিব আলহাজ্ব এইচ এম মুজিবুল হক শাকুর এর নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, লায়লা ইব্রাহিম বানু, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ ইব্রাহীম, এডভোকেট ফয়েজুর রহমান বেলাল, এম. গোফরান চৌধুরী, ডাক্তার মাহবুুুবুল আলম ও ডাক্তার মুহাম্মদ মিরাজ প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে এই পর্যন্ত ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
যা চট্টগ্রামের তিনটি সংস্থা যথাক্রমে চসিক, সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে চারটি প্রকল্পের ভিত্তিতেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রকল্পগুলো কার্যাদেশে বর্ণিত সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করতে সংস্থাগুলো বরাবরই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এমনকি বারংবার মেয়াদ বর্ধিত করে অনাহুত কালক্ষেপণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যৎ কারণে কেবলই সরকারী অর্থের শ্রাদ্ধ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ইতিবাচক সুফল মিলছে না। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প কাজ সমাপ্ত না হওয়া, প্রকল্প দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাসমূহের পারস্পরিক সমন্বয়হীনতা, আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা সর্বোপরি সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই এমনটি হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে গড়িমসি অবহেলা ও কালক্ষেপণের কারণে অরক্ষিত ড্রেন নালা সমূহে পরে নগরিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে অনেক, তা থেকে বাদ পড়েনি অবুঝ শিশু, ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ ও সাধারণ জনগণ। গত ৬ বছরে ৫ হাজার ৭ শত ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এতেও আশানুরূপ সুফল আসেনি। জোয়ার’র পানি ঠেকাতে বিভিন্ন খালের মুখে ৪০টি জল কপাট (স্লুইচ গেট) নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫টির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলেও অবশিষ্ট ৩৫টির কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়েছে। যা দ্রুত সম্পন্ন করা না গেলে আগামী বর্ষায়ও নগরবাসী অভিশপ্ত জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ পাবে না বলে আমরা মনে করি।
একসময় চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় শতাধিক খাল থাকলেও পরবর্তীতে তা ৭১ এসে দাড়ায় কালের পরিক্রমায় খালগুলো এখন নাই হয়ে গেছে বর্তমানে চট্টগ্রামে মোট ৫৭ টি খাল রয়েছে, তন্মধ্যে ৩৬টি খাল সংস্কার করা হলেও অবশিষ্টগুলো এখনও বেদখল হয়ে আছে। এক্ষেত্রে এসবের সঠিকতা নির্ণয় পূর্বক তদন্ত কমিটি গঠন করে আর এস, পিএস ও বি এস মূলে খালগুলো পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ খুবই জরুরী। এছাড়াও নগরীতে প্রায় ১৬ হাজার নালা-নর্দমার অস্থিত্ব রয়েছে।
এসবই পরিকল্পিত উপায়ে গভীরভাবে খনন করা, খালের উভয় পাশে উঁচু করে রিটেইনিং ওয়াল দেওয়া, বা বাঁধ নির্মাণ করা, বেশী বেশী জলধার নর্মান এবং নালা-নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন রেখে পানি চলাচলের উপযুক্ত করা। শুধু তাই নয়- কর্ণফুলী নদীসহ চট্টগ্রামে বহমান খালগুলোর নাব্যতা রক্ষায় নিয়মিত ড্রেজিং, অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করা না গেলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এছাড়াও কর্ণফুলি নদীকে অবৈধ দখল মুক্ত করে নদীর উভয় পাড়ে শক্তিশালী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান করে তার উপর রিং রোড, কালভার্ট ও ব্রীজ করে দিলে জলাবদ্ধতা হতে চট্টগ্রামবাসী পরিত্রান পাবে।
আর চসিকের নতুন ৩টি খাল খনন প্রকল্প (বারইপাড়া খাল সহ) খনন ১০ বছরেও সমাপ্ত হয়নি। যা খুবই দূঃখজনক হলেও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই সংস্থা যথাক্রমে চসিক ও সিডিএ জলাবদ্ধতা নিয়ে একে অপরকে দুষছে। যেকারণে দু সংস্থার মধ্যকার সমন্বয়হীনতা ও দূর্বল চিত্র চরমভাবে ফুটে উঠেছে। যা সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। অন্যদিকে দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইনটির উদ্বোধনের আগেই পানিতে বেঁকে যায়, রেললাইন থেকে সরে যায় মাটি ও পাথর।
অর্থাৎ ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের এ মেগা প্রকল্পের কাজও টেকসই হয়নি। উক্ত প্রকল্প সঠিক ভাবে বাস্তবায়নে ক্ষতি গ্রস্থ এলাকা সহ পুরো এলাকায় চাহিদা মত ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মান করে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং চলমান প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে সঠিক ও পরিকল্পিত ভাবে সমাপ্ত করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠন করা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে। দেশের ইতিহাসে এবছর সবচেয়ে বেশী মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গুর মওসুম এখনো চলছে, বছর শেষ হতে চারমাসের বেশী বাকী। ফলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাড়াবে, তানিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জনসাস্হ্য বিশেষজ্ঞরাও উদ্বিগ্ন। ডেঙ্গুর অবাঞ্চিত শিকার হয়ে ইতোমধ্যে অনেক মানুষের প্রাণ সংহার ঘটেছে।
সর্বত্র ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী মশার আশঙ্কাজনক বিস্তার ঘটেছে, যা থেকে চট্টগ্রামও বাদ যায়নি। শতবর্ষী জরাজীর্ণ কালুরঘাট রেল সেতুটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে। যে কোন মূহুর্তে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। যে জন্য একটি সড়ক কাম রেল সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। দু’বার প্র্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতু পাস হয়। এমনকি মিডিয়ায় একাধিকবার উক্ত সেতুর নকশা প্রকাশ হতেও দেখা যায়। কোন অদৃশ্য কারণে এ সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ফাইল চাপা পড়ে আছে তা মোটেও বোধগম্য নয়।
সেতুটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ব্রিটিশ আমলের চট্টগ্রামের শহরতলী খ্যাত বোয়ালখালী তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনসাধারণের দুর্ভোগের সীমা নেই। এছাড়া কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মানাধীন রেললাইন চালু করতে হলে কালুরঘাট সেতুর প্রয়োজনীয় অনস্বীকার্য। তাই অনতিবিলম্বে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে উভয় পাড়ের জনসাধারণের দুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিনীত অনুরোধ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের।
+ There are no comments
Add yours