সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদের বাড়ির বিদ্যুতের বিল মাসিক ৩২, ৫২, ৭২, ৬৫ টাকা করে দেখিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)।
আর মন্ত্রীসহ তাঁর ছেলে, ভাই ও প্রয়াত বাবা মিলে পুরো পরিবারের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৯ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এসব বিল বকেয়া পড়েছে। আইন অনুযায়ী বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি নেসকো।
গতকাল (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের লোকজনের কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নেসকোর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান। এরমধ্যে শুধু মন্ত্রীর নামে আবাসিক ও সেচ মিটারের বিপরীতে নেসকোর মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ ৭২ হাজার ৯৬৪ টাকা দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।
postpaid.nesco.gov.bd–এ ঢুকে imput consumer number দিয়ে অপরিশোধিত বিল অংশে গিয়ে এই চারজনের বিদ্যুতের বকেয়া বিলসংক্রান্ত তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যায়। যা ঢাকা পোস্টের সংগ্রহে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনে টানা দুইবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত করিম উদ্দিন আহমেদের ছেলে তিনি।
নেসকো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নামে কালীগঞ্জের কাশীরাম গ্রামে একটি মিটার রয়েছে। এটি সেচ সংযোগে ব্যবহার হয়ে আসছে। যার ডিজিটাল কনজুমার নম্বর ২৮০০৪৮৯৪; মিটার নম্বর ৫১৫৬২৫১৩। এ মিটারে প্রায় চার বছরে ৬১ হাজার ৩৪৪ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে। এখনো তা বকেয়া রয়েছে।
কাশীরাম গ্রামে ব্যবহৃত মিটারের বিপরীতে ২০২২ সালের মার্চ মাসের বিল ১৭ হাজার ২৩৬ টাকা, বিলম্ব ফি ৮৬২ টাকা; চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির বিল ৯ হাজার ৩৯০ টাকা, বিলম্ব ফি ৪৭০ টাকা; মার্চের বিল ৯ হাজার ৮৫০ টাকা, বিলম্ব ফি ৪৯৩ টাকা; এপ্রিলের বিল ৯ হাজার ৮৫০ টাকা, বিলম্ব ফি ৪৯৩ টাকা এবং মে মাসের বিল ৯ হাজার ৬৪০ টাকা ও বিলম্ব ফি ৪৮২ টাকা।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত গড়ে প্রতিমাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকার বিল দেখানো হলেও জুন ও জুলাই মাসে শূন্য বিল দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ১৭ হাজার ২৩৬ টাকা বিল দেখানো হলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে শূন্য বিল দেখানো হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাস বিল দেখানো হয়েছে ৮০৪ টাকা এবং মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিমাসে বিল দেখানো হয়েছে ১৮০ টাকা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুর নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, যদি বিদ্যুৎ–সংযোগগুলো বকেয়া বিল থাকার পরও চলমান থাকে এবং নিয়মিত বিল করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে এসব বিদ্যুৎ–সংযোগের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। তবে বকেয়া পরিশোধ করতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করতে কোনো গাফিলতি করা হয়েছে কি না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
অন্যদিকে নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করতে কোনো অসঙ্গতি হয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হবে। এজন্য আগামী সপ্তাহে আমি নিজেই কালীগঞ্জ অফিস পরিদর্শনে যাব। অনিয়ম হলে অবশ্যই বিদ্যুৎ আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
+ There are no comments
Add yours