ফেনীতে বেড়েই চলছে আত্মহত্যার প্রবণতা। পুলিশ ও বিভিন্ন তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জেলায় আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ পারিবারিক কলহ। এছাড়া বিভিন্ন অপ্রাপ্তি ও মানসিক সমস্যা থেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে এ পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে।
বেশ কিছুদিন ধরে নোমান ফেসবুকে তার বিভিন্ন কষ্টের কথা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে আসছিলেন। এসব স্ট্যাটাসে তিনি প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছেদ ও পারিবারিক কলহের বিষয়টি ইঙ্গিত দিতেন। এর আগেও তিনি একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে প্রায় তিনদিন অচেতন ছিলেন বলেও দাবি করে তার বন্ধু-স্বজনরা।
চলতি বছর জেলায় সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে দাগনভূঞায়। এ উপজেলায় চলতি বছর ২০ জন আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া ফেনী সদর উপজেলায় ১৯ জন, সোনাগাজীতে ১৩ জন, ফুলগাজীতে ১০ জন, ছাগলনাইয়ায় ৭ জন এবং পরশুরামে ৬ জন রয়েছে। তাদের অধিকাংশ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মহত্যার হার উদ্বেগজনক হলেও প্রায় ১৬ লাখের বেশি মানুষের ফেনীর এ জনপদে নেই কাঙ্ক্ষিত মানসিক চিকিৎসা সেবা। শহরে বেসরকারি উদ্যোগে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মানসিক চিকিৎসা সেবা দিলেও নেই কোনো সরকারি উদ্যোগ। ফেনী স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারিভাবে ফেনীতে মানসিক চিকিৎসায় কোনো পোস্টিং নেই।
গত ২ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভার পূর্ব চরগনেশ রেজি মিয়াজী বাড়িতে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে রোকশানা আক্তার আকলিমা (১৪) নামে এক কিশোরীর আত্মহত্যা করে। সে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
জেলায় মানসিক চিকিৎসায় নিয়োজিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ফেনী সাইকিয়াট্রি হসপিটালের চেয়ারম্যান ডা. তবারক উল্ল্যা চৌধুরী বায়েজীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেনীতে মানসিক রোগের চিকিৎসা অপ্রতুলতা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন জনশক্তির অভাব চরমে।
জেলায় মানসিক রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ১০ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় আসছে। আবার ২০ শতাংশের বেশি যেখানে যাচ্ছে সেখানে উপযুক্ত সেবা পাচ্ছে না। এছাড়া মানসিক রোগ নিয়ে এখনও সামাজিক কুসংস্কার, অনীহা এবং অজ্ঞতা রয়েছে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জাকারিয়া সিদ্দিকী বলেন, ফেনীর মানসিক রোগে আক্রান্ত সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে বেশিরভাগ কারণ প্রবাসী স্বামী, পারিবারিক কলহ, হতাশা, বেকারত্ব ও নানা অপ্রাপ্তি। সেবাগ্রহীতাদের উল্লেখযোগ্য অংশ দেরি করেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এক্ষেত্রে গ্রামীণ জনপদে আরও সচেতনতা প্রয়োজন।
+ There are no comments
Add yours