একজন সফল কন্যা। সফল মা। সফল রাষ্ট্রনায়ক। ১৮ কোটি বাঙালির স্বপ্ন সাহসের সারথি। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন। সংকট, হুমকিতে বুক চিতিয়ে লড়তে পারেন, আবার যে কোনো দেশের দুর্যোগ-দুর্বিপাকে পাশে দাঁড়ান। নিখাদ দেশপ্রেম, অপরিমেয় সাহস, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সততায় অনন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালের পরিক্রমায় আসীন হয়েছেন বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে।
পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করেছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে। ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের অনেক সদস্যই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে থাকেন। অস্বাভাবিক আয়ের ন্যূনতম প্রমাণ পেলে এসব দেশের সরকার তা ফলাও করে প্রচার করত। কিন্তু পারেনি।
কারণ শেখ হাসিনা পরিবারের প্রত্যেক সদস্য সততায় একনিষ্ঠ। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায়ই ঘোষণা করা হয়েছে ভিসা নীতি। হুমকি দেওয়া হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের। দৃঢ়চেতা প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে বসেই এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন। প্ররোচিত হয়ে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণেও এমন প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি দেখা গেছে তার কণ্ঠে।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীবিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের ৭৭ বসন্তের প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে সংগ্রামগাথা। মাথা না নোয়ানোর সংস্কৃতি তৈরি করতে দিতে হয়েছে নিজের তাজা রক্ত। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস থেকেছেন গৃহবন্দি। ২০ বার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েও নিজেকে সাধারণের কাতারে নিয়ে গেছেন। সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন ত্যাগ করে সবসময় জড়িয়েছেন মানুষের ভালোবাসায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অসীম সাহসে লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
দেশ যখন চরম অস্থিরতায়। আওয়ামী লীগ ক্রমান্বয়ে ছন্নছাড়া। সেই সংকটে হাল ধরেছিলেন উপমহাদেশের প্রাচীনতম এ দলটির। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, দলীয় কর্মীদের পাহাড়সম প্রত্যাশা এবং সাধারণের ভালোবাসাকে এক সুতায় বেঁধে ১৯৮১ সালে ত্রাতার ভূমিকা নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেই সংকটে সফলভাবে উতরে গিয়ে লড়াই করেছেন এরশাদ সরকারের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজপথে। মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত হলেও কর্মীদের ঢাল হয়েছিলেন সবসময়। ক্ষমতার মসনদকে চূর্ণবিচূর্ণ করে স্বাধীন বাংলাকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপ দিয়েছেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ওই বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ নেতাকর্মী আহত হন।
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান শেখ হাসিনা। দেশের চিরাচরিত ক্ষমতার ক্ষেত্রকে ভেঙে মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লড়াই শুরু করেছিলেন। ফের ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আরোহণ করে পূর্ণতা দেন সেই লড়াইয়ের। তার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট, করোনাকাল সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। নানা দুর্যোগেও সচল রেখেছেন দেশের অগ্রযাত্রা। তার সময়োপযোগী নেতৃত্ব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বদরবারেও।
বর্তমানে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুঃসাহসিক এ অভিযাত্রায় যুক্ত হয়েছে অজস্র সাফল্য-স্মারক। অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রবক্ষে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয়েছে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে সীমান্তে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অধিকার। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আধিপত্য দেখানো হয়েছে মহাকাশেও। প্রতিষ্ঠা করেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ।
+ There are no comments
Add yours