দুই যুগ আগে জীবিকার তাগিদে গাইবান্ধা থেকে রাজধানী ঢাকায় আসেন আমিরুল ইসলাম। চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
থাকেন লালবাগের ছোটখাটো একটি ভাড়া বাসায়। দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকলেও ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ি কোনোটাই কিনতে পারেননি। তিনি বলেন, সরকারি আবাসন প্রকল্পের উচ্চমূল্য। ঋণও সহজে পাওয়া যায় না। আর যা বেতন পাই, সন্তানদের লেখাপাড়া আর সংসার চালাতেই ফুরিয়ে যায়।
আমিরুলের মতো কর্মজীবী অনেকেই স্বপ্ন দেখলেও রাজধানীতে নিজস্ব আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ মানুষ নিজের বাসাবাড়িতে বাস করেন। বাকি ৭০ শতাংশ মানুষের নিজের ঘর নেই। সে হিসাবে ঢাকায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের নিজের ঘর নেই। সরকারি হিসাবে রাজধানীর জনসংখ্যা ২ কোটি ১০ লাখ হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী ১ কোটি মানুষের নিজস্ব কোনো বাসস্থান নেই। বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভাড়া বাসায়, সরকারি বাসায় কিংবা বস্তিতে বসবাস করতে হয়। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন না। সরকারি সুবিধাভোগীদের বেশিরভাগই সম্পদশালী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তবে বাস্তুহারা মানুষের জন্য রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প।
এমন পটভূমিতে আজ সোমবার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস। ১৯৮৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪০তম অধিবেশনের সিদ্ধান্তের আলোকে প্রতিবছরের অক্টোবরের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস পালন করা হয়। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য—‘বৈষম্য হ্রাসের অঙ্গীকার করি, সবার জন্য টেকসই নগর গড়ি’। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
রিহ্যাব সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, সরকার স্বাস্থ্য-চিকিৎসা-শিক্ষা খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। এসব মৌলিক চাহিদার মতো বাসস্থানও একটি। রাজধানীবাসীর আবাসনের জন্য সরকার এ খাতে কখনো ভর্তুকি দেয়নি। এমনকি স্বল্প সুদে দেয়নি ঋণও। সরকারের উচিত ছিল স্বল্প সুদে ঋণ ও লো কস্ট হাউজিং নির্মাণ করে বরাদ্দ দেওয়া। অল্পসংখ্যক লো কস্ট হাউজিং তৈরি করলেও চাহিদার চেয়ে তা অনেক কম। এজন্য রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষের নিজের ঘর নেই।
+ There are no comments
Add yours