পরমাণু যুগে বাংলাদেশ

Estimated read time 1 min read
Ad1

বিনিয়োগের আকার বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে রাশিয়া।

ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগ দেবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করবেন।

এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর জ্বালানির নতুন যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে শুরু হচ্ছে ইউরেনিয়ামের ব্যবহার।

দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে করা হয়েছে বর্ণাঢ্য আয়োজন। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি, রূপপুরে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাশিয়ার রোসাটমের মহাপরিচালক আলেপি লিখাচেভসহ সুধী সমাজের প্রতিনিধি, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তেজস্ক্রিয় জ্বালানির প্রথম চালান দেশে এসে পৌঁছায়। রাশিয়ার একটি উড়োজাহাজে করে এ জ্বালানি বাংলাদেশে আনা হয়। পরদিন শুক্রবার সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান ঢাকা থেকে প্রকল্প এলাকায় আনা হয়।

শনিবার দুপুর নাগাদ ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িগুলো রূপপুরে পৌঁছায়। এরই মধ্য দিয়ে বিশ্বে নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হলো বাংলাদেশ। আগামী বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এদিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রভাবে বদলে যাচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চল। বিশেষ করে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম রূপপুরের চেহারাই পাল্টে গেছে। এক সময়ের নিস্তব্ধ এ গ্রামটি এখন দিনরাতজুড়ে থাকছে কর্মচঞ্চল। শুরুতে প্রকল্পটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সংশয় থাকলেও এখন তারা উজ্জীবিত। অবকাঠামো নির্মাণকাজে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এ প্রকল্পে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞে উত্তরাঞ্চলজুড়েই নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

জানা গেছে, রোসাটম রূপপুরের জন্য প্রথম তিন বছর জ্বালানি বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। প্রথম ইউনিটের জন্য সাত ধাপে ১৬৮টি ফুয়েল অ্যাসেমব্লি (জ্বালানি) আনা হবে, যার প্রথম কার্গো এরই মধ্যে দেশে এসেছে। প্রথম তিন বছর প্রতি ১২ মাস পরপর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জ্বালানি পরিবর্তন করে নতুন জ্বালানি লোড করা হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে জ্বালানি পরিবর্তন করা হবে ১৮ মাস পরপর। দুই ইউনিটের জন্য ১৮ মাসে ২৫ টন ইউরেনিয়াম লাগবে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী এর মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, আপাতত চুল্লিতে জ্বালানি লোড করা হবে না। স্টোরেজে রাখা হবে। পরে গ্রিড লাইন প্রস্তুত হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এজন্য দুই মাস সময় লাগবে। আর পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন শুরুর জন্য প্রয়োজন হবে ১০ মাস।

আর্থিক বিনিয়োগ বিবেচনায় একক হিসেবে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া, যা ২৮ বছরে পরিশোধ করতে হবে। প্রতিটিতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে এ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। রোসাটমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটোমসট্রয় এক্সপোর্ট। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭৪ শতাংশ।

২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরকালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রাক-প্রারম্ভিক পর্যায়ের কাজ সম্পাদনের জন্য ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির ভিত্তিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায় কাজ উদ্বোধন করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours