কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় অযত্নে নষ্ট হচ্ছে ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত মোগল আদলে তৈরি প্রাচীন স্থাপত্য সাহেব বাড়ির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
অযত্নে-অবহেলায় কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে বাড়িটি। নতুন প্রজন্মের জন্য ইতিহাস ধরে রাখতে বাড়িটির সংরক্ষণের দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড হতে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকে মাধবপুর গ্রামে এটি অবস্থিত। প্রাচীন এই বাড়িটির নাম সাহেব বাড়ি নামেই পরিচিত। ১৯২৫ খ্রিস্টব্দে সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুই ভাই মো. আলতাফুর রহমান মিয়া (রঙ্গু মিয়া) ও মো. হাবিবুর রহমান মিয়া (ছন্দু মিয়া ) বিভিন্ন নান্দনিক নকশাখচিত দৃষ্টিনন্দন ওই বাড়িটি নির্মাণ করেন।
মো. হাবিবুর রহমান (ছন্দু মিয়া) ছিলেন তৎকালীন জেলা রেজিস্ট্রার। তাদের বাবার নাম ছিল মো. জারু মিয়া। ওই বাড়িটিতে বর্তমানে কেউ বসবাস করেন না। বাড়িটি জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাড়িটির পূর্বপাশে দুটো শানবাঁধানো ঘাটসহ একটি বড় পুকুর আছে। এর মধ্যে একটি ঘাট সংরক্ষিত ছিল নারীদের জন্য।
জানা যায়, তাদের পূর্বপুরুষ হুক্কা লাল বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে ত্রিপুরা বর্তমান কুমিল্লায় এসে বসতি স্থাপন করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে যেসব দেশপ্রেমিক বীর সেনানীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দান করে গেছেন তাদেরই একজন ছিলেন হুক্কা লালের পিতা মোহন লাল।
পলাশীর যুদ্ধের পর মীরজাফর ছেলে মিরনের অত্যাচার থেকে বাঁচার লক্ষ্যে রাতের আঁধারে নৌকাযোগে দীর্ঘপথ পারি দিয়ে পূর্ববঙ্গের ত্রিপুরা বর্তমানে কুমিল্লা জেলার কালিদাহ সায়য়ের পূর্বপাড়ে সপরিবারে চলে আসেন হুক্কা লাল। এই স্থানে আগে কোনো জনবসতি ছিল না, তাই হুক্কা লাল তার বাবা মাধব লালের নাম অনুসারে এই স্থানটির নামকরণ করেন মাধবপুর।
তারপর থেকে পরিবারসহ তিনি এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। পরে ইয়েমেন থেকে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক শেখ মহিউদ্দিন মৌলভী পার্শ্ববর্তী মিরপুর গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। পরে মহিউদ্দিন মৌলভীর সঙ্গে হুক্কা লাল আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করে সনাতন ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং নিজের নাম বদলে রাখেন শেখ লাল। তারপর থেকে একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম হিসেবে সপরিবারে তিনি এখানেই বসবাস করে গেছেন। এই সাহেব বাড়ি তারই বংশধরের নির্মিত তৎকালীন আলিশান প্রাসাদ।
+ There are no comments
Add yours