আবদুল্লাহ আল রিয়াদ(বাঁশখালী): ঘুর্ণিঝড় ‘হামুন’ গতকাল সন্ধ্যা ৭টা হতে রাত ১০টা নাগাদ উপকূল অতিক্রম করে। বাতাসের তিব্র গতির কারনে প্রথম আঘাতেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাঁশখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। সরে জমিনে দেখা যায় বাঁশখালীর কালীপুর, কাথরিয়া, বৈলছড়ি, বাহারছড়া,খানখানাবাদ, গন্ডামারা, পুকুরিয়া, ছনুয়া, পুইছড়ি, সরল, শীলকূপ ইউনিয়নে বড় বড় গাছ উপড়ে কাঁচা ঘর ও টিনের ঘর ভেঙ্গে গেছে। প্রধান সড়ক ও অভ্যন্তরীন সড়ক গুলোতে গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্হা অচল হয়ে আছে।
বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিড়ে তার গুলো বিপদজনক অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। উপজেলার কালীপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউনুসের সহধর্মিণী হালিমা খাতুন জানান: ব্যাংক হতে লোন করে কিছু দিন আগে নির্মিত বসতঘরে বিশালাকার গাছ উপড়ে পড়ে ঘরের প্রায় ৮০শতাংশই ক্ষতিগ্রস্হ হয়ে যায়। বিবাহযোগ্য মেয়েকে দেখতে আসার কথা ছিল পাত্র পক্ষের,সেটা আর হলোনা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহআলমেরও একই অবস্থা। মাথা গুঁজার একমাত্র অবলম্বন পুরোদস্তুর গাছের নিছে। বউ বাচ্চা নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি নিয়ে শংখিত পুরো পরিবার।
বাহারচরা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বামী হারা তিন কন্যা সন্তানের জননি রেহেনা আক্তার বলেন, ‘স্বামীর অবর্তমানে অনেক কষ্ঠ করে বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করছি সেলাই কাজ করে । ঘরের উপর গাছ পড়ে আমার সেলাই মেশিনটা নষ্ট হয়ে গেছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঘরটা করেছি। সরকারের কাছে আকুল আবেদন করছি যেন আমার মাথা গুঁজার ঠাঁই হয়।
৪নং বাহারছড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনামুল হক জানান:- ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে দশটির অধিক ঘরবাড়ি, গরুর খামার, শাক-সবজি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। চাম্বলের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, আমার ইউনিয়ন পাহাড় অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় পানের বরজ ও শাক-সবজির চাষ হয়, গতকাল ঘূর্ণিঝড় হামুনের তান্ডবে প্রায় ৯০ শতাংশ পানের বরজ ও শাক-সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়াও প্রায় ৫০টি বাড়িঘর ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে দুমড়ে মুচড়ে যায় যার আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৫কোটি টাকা হবে বলে তিনি জানান।
সরল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়ন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কাচাঘর, টিনের ঘর মিলে প্রায় ৫০ এর উপরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ২নং ওয়ার্ডের মো. শফিউল আলম (৫০) একজন গাছ পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে তাকে সুচিকিৎসার জন্য বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়েছে। বাঁশখালী থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি কামাল উদ্দীন পি পি এম বলেন: ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার পর হতে তৈলারদ্বীপ সেতু হতে পুইছড়ি পর্যন্ত প্রধান সড়কে উপড়ে পড়া গাছপালা প্রশাসন ও স্হানীয়দের সহায়তায় পরিস্কার করে যানচলাচলের ব্যবস্হা করে দেয়া হয়।
হামুনের আঘাতে ব্যাপক ঘরবাড়ি,গাছপালা,শাক-সবজী সহ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হন বলে তিনি নিশ্চিত করেন,এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় আহতের খবর পেলেও কোন মৃত্যুর সংবাদ পাননি বলে জানান। হামুনের আঘাতে ক্ষয়- ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হতে পারে বলে তিনি অনুমান করেন। বাঁশখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবেলায় ১০৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়নি। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণের চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণ করব।
+ There are no comments
Add yours