গতকাল বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিএস। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিধারী উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার এখন ১২ শতাংশে পৌঁছেছে। সংখ্যার বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেকার বসে আছেন প্রায় আট লাখ নারী-পুরুষ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাস্তবে বেকারের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ, প্রতিবছর যেসব তরুণ-তরুণী স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন, তাঁদের প্রায় অর্ধেক গড়ে দু-তিন বছর বেকার থাকেন। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, কোভিড মহামারি এবং অর্থনীতির চলমান সংকটের কারণেই দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে।
আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিগত ৩০ দিনের মধ্যে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি সর্বশেষ সাত দিনে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলে তাঁকে বেকার হিসেবে ধরা হবে।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন ব্যক্তিদের মধ্যে বেকার ১ শতাংশের একটু বেশি। সংখ্যার দিক থেকে এমন বেকার আছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার। এ ছাড়া প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোদের মধ্যে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা ৩ লাখ ২২ হাজার বেকার আছেন। পড়াশোনা করেননি বা স্বল্প শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব কম হওয়ার কারণ এই শ্রেণির মানুষ যা কাজ পান, তা-ই করেন।
বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, মাধ্যমিক পাস করেছে এমন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৭ লাখ ৩৯ হাজার বেকার। উচ্চমাধ্যমিক পাস করাদের মধ্যে বেকার ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে দেশে ২৫ লাখ ৮২ হাজার বেকার আছেন। বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ আছেন। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত আছেন ৭ কোটি ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। সার্বিকভাবে কর্মজীবী নারী-পুরুষের মধ্যে ৪ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার পুরুষ এবং ২ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার নারী।
বেকার মানুষের পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী বের করে বিবিএস। আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিগত ৩০ দিনের মধ্যে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি সর্বশেষ সাত দিনে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলে তাঁকে বেকার হিসেবে ধরা হবে।
তবে নিষ্ক্রিয় জনগোষ্ঠীও আছে। তারা শিক্ষায় নেই, প্রশিক্ষণে নেই, আবার কাজের মধ্যেও নেই। বিবিএস বলছে, এদের সংখ্যা ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার।শ্রমশক্তিতে ২ কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার যুবক-যুবতী আছেন, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। তাঁদের মধ্যে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার কাজের মধ্যে আছেন। যুবক-যুবতীদের মধ্যে ২১ লাখ ৪৮ হাজার বেকার, যা দেশের মোট বেকার গোষ্ঠীর ৮৩ শতাংশ।
দেশে আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান হয় মাত্র ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। বাকি প্রায় ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান হয়। যেখানে কোনো চাকরির নিশ্চয়তা নেই। কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। যেকোনো সময় মালিকপক্ষ চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে পারে। আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি হয় বরিশাল বিভাগে। আর সবচেয়ে কম সিলেটে।
+ There are no comments
Add yours