সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা অসাধ্য নয় : সিইসি

Estimated read time 1 min read
Ad1

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে বুধবার সন্ধ্যায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয় তার ভাষণ। ভাষণে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে দেওয়া ১৩ মিনিটের ভাষণে কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রথমে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মূল্যবোধসমৃদ্ধ আবেগ ও চেতনা থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ৩০ লাখ প্রাণ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুত্থান হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রবর্তিত হয়। সেই থেকে দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পথচলা।

সিইসি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান দেশের আপামর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি। সংবিধানে জনগণকেই ক্ষমতার মালিক ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জনগণের সেই মালিকানা প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন। রাষ্ট্র, সংসদ, সরকার ও জনশাসন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হওয়ার জনআকাঙ্ক্ষা প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের পাতায় পাতায় বিধৃত হয়েছে।

সিইসি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হতে পারে কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমেই। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে কার্যকরভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়, নির্বাচন অধিক পরিশুদ্ধ ও অর্থবহ হয়। তাতে জনমতেরও শুদ্ধতর প্রতিফলন ঘটে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে সংহত ও টেকসই হয়। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উৎকর্ষসাধন হয়। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের আপামর জনগণ রাজনীতির বিষয়ে সচেতন। নির্বাচন বিষয়েও জনগণ সমভাবে সচেতন হয়ে এর গুরুত্ব সম্যক উপলব্ধি করে থাকবেন। প্রার্থীরা সে বিষয়ে প্রচারণার মাধ্যমে ভূমিকা পালন করে থাকবেন। কমিশনও সর্বসাধারণ ও বিশেষত ভোটারগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করতে প্রচারণামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলকে আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন করতে হবে। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তাকেও আইন ও বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুধাবন, প্রতিপালন ও প্রয়োগ করে সততা ও নিষ্ঠার সাথে আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনবিষয়ক আইন ও বিধি-বিধান তাদেরকে অবহিত করার লক্ষ্যে কমিশন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে এবং করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভোটকেন্দ্রসমূহের পারিপার্শ্বিক শৃঙ্খলাসহ প্রার্থী, ভোটার, নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেকোনো মূল্যে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করতে হবে।

৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ

আগামী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি রোববার ৩০০ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ৩০ নভেম্বর; মনোনয়নপত্র বাছাই হবে আগামী ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর; রিটার্নিং অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি হবে ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর; প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর; রিটার্নিং অফিসারগণ প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর; নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ হবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি।

স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের সুযোগ

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন একটি বিশাল, কঠিন ও জটিল কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সহজীকরণ ও স্বচ্ছতা প্রয়োজন। আইন ও বিধি-বিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সার্বিকভাবে স্বচ্ছ, সহজ, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল করার অভিপ্রায়ে যেকোনো স্থান থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে নমিনেশন দাখিলের এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে ভোটার সাধারণ ও সর্বসাধারণের জন্য দিনব্যাপী কেন্দ্র ও কেন্দ্রের পোলিং সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণের সুবিধাসম্বলিত দুটি ডিজিটাল অ্যাপ কমিশন সম্প্রতি চালু করেছে।

গণমাধ্যম ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য

স্বচ্ছতা বা দৃশ্যমানতা নির্বাচনের বিশুদ্ধতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিপাদনে সহায়ক হয়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য। তাই আমরা দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি। ডিজিটাল প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করে দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াকে যত দূর সম্ভব দৃশ্যমান করে উপস্থাপন করা গেলে সৃষ্ট স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের বিশুদ্ধতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিপাদিত্য হতে পারে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় কমিশনের আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে। পক্ষান্তরে অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সম্প্রচার করে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার যে কোনো অপপ্রয়াস প্রতিহত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।

ভোট দিতে গিয়ে হস্তক্ষেপ বা বাধার সম্মুখীন হলে প্রতিহত করবেন

সম্মানিত সকল ভোটারকে আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা আগামী ২০২৪ এর জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে অনুষ্ঠেয় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসাহ, উদ্দীপনা, সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে আপনাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে সংসদ ও সরকার গঠনে নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন। ভোট আপনার, ভোট প্রদানে কারো হস্তক্ষেপ বা প্ররোচনায় প্রভাবিত হবেন না। কোনো রকম হস্তক্ষেপ বা বাধার সম্মুখীন হলে একক বা সামষ্টিকভাবে তা প্রতিহত করবেন। প্রয়োজনে অবিলম্বে কেন্দ্রের প্রিসাইডং অফিসারকে অবহিত করবেন। প্রিসাইডং অফিসার যে কোনো মূল্যে যে কোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করে ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইনত দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বাধ্য।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours