দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর লক্ষ্যে চলমান আন্দোলন জোরদার করতে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সব স্তরের নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে চাইছে বিএনপির হাইকমান্ড।
আত্মগোপনে থাকা নেতাদের এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে এমন বার্তা। অন্যদিকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্য কর্মসূচিতে সিনিয়র নেতাদের অংশগ্রহণ চাইছেন।
এ অবস্থায় গত ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া নেতারা এখন দ্বিমুখী চাপে আছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অনেক নেতাকে আটক করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেই সময় গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে যান দলটির অধিকাংশ নেতা।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সরকারের দিক থেকে চাপ আসতে পারে—এমন আশঙ্কায়ও গা ঢাকা দেন কেউ কেউ। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আন্দোলনে নতুন মাত্রা আনতে চায় বিএনপি। এ কারণে আত্মগোপনে থাকা নেতাদের প্রকাশ্য কর্মসূচিতে চাইছে দলটির হাইকমান্ড।
তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আত্মগোপনে থাকায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কর্মসূচি সফল করতে তাদেরই মূল ভূমিকা রাখতে হচ্ছে। হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ঝটিকা মিছিল হচ্ছে তাতে সিনিয়র নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। কোনো কোনো নেতা কিছু সময়ের জন্য মিছিল করেই লাপাত্তা হয়ে যান। এর মধ্যে অবশ্য সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ব্যতিক্রম ভূমিকা রাখছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। গতকালও তিনি রাজশাহী গিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন।
জানা গেছে, আগামীতে ঘোষিত সামনের কর্মসূচি সফল করতে আত্মগোপনে থাকা অন্য নেতাদেরও প্রকাশ্যে আসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের দেওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, দাবি আদায়ের ফয়সালা রাজপথেই করতে হবে; গ্রেপ্তার হলে রাজপথ থেকেই হতে হবে।
বিএনপির কোনো কোনো নেতা জানান, তাদের আশা ছিল, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে; কিন্তু এখনো বিএনপিকে মাঠে জায়গা দিচ্ছে না সরকার। বিএনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীদের এখনো নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এমনকি পেশাজীবীদের সমাবেশ থেকে পেশাজীবীদেরও গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি) ও শ্রমিক দলের যৌথ উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ হয়। সেখান থেকে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গত ২৪ নভেম্বর একই স্থানে পেশাজীবী সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে টঙ্গীতে পেশাজীবী নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গত ২০ নভেম্বর ধোলাইখালের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মো. জাকির হোসেনকে। এসব গ্রেপ্তারের ঘটনা দলের নেতাদের ভাবনায় ফেলে দেয়। তবে এসবের মধ্যেও হরতাল-অবরোধের বাইরে ভিন্নধর্মী এবং মানবিক কর্মসূচির চিন্তা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় হাইকোর্টের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ঢাকায় মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
দলের যেসব নেতাকর্মী আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে খুন, গুম কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারকে এই কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হবে। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদেরও এসব কর্মসূচিতে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ঘোষিত নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো আন্দোলনকে এখন ভিন্ন মাত্রায় নেওয়ার চিন্তা করছে। নির্বাচনের তপশিল অনুযায়ী আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে প্রথম ধাপ এবং এর পরদিন ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের নির্ধারিত দিন পর্যন্ত আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে দেখছেন এসব দলের নেতারা। আন্দোলন সফল করতে বিএনপির হাইকমান্ড জনমত পক্ষে রাখা, কূটনৈতিক তৎপরতা ও সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি শেষ পর্যায়ে সমমনা সব দলকে এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করছে বলে জনা গেছে।
+ There are no comments
Add yours