দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বয়কট করে একদফার আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিএনপি ও যুগপতে থাকা মিত্ররা।
দল ও জোটের বিভিন্ন ফোরামে ৭ জানুয়ারির ভোট ঠেকানোর বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা থাকলেও বর্তমান বাস্তবতায় সেটা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তাদের অনেকে। মিত্রদের পরামর্শ ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপি এখন ভোট ঠেকানোর চেয়ে ভোটারদের ভোট বর্জন করানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ লক্ষ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করার কৌশল খুঁজছে দলটি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতাবলয়ের বাইরে থাকায় এমনিতেই বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি অনেকখানি কমে গেছে, তার ওপর রয়েছে সরকারের নির্বিচার দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার।
তাছাড়া গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি।
ফলে তাদের পক্ষে ভোট ঠেকানো সম্ভব নয়। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ভোট ঠেকাতে পারেনি।
বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ধারণা–বর্তমানে দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকলেও বাংলাদেশে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাওয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব মোটেও সরেনি। তাই তাদের এখন চেষ্টা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর ভোটাররা বর্জন করলেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে না গেলে বিএনপিবিহীন নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের চূড়ান্ত অনাস্থার বিষয়টিও প্রতীয়মান হবে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমাসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বে নির্বাচন আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমনটা হলে নির্বাচন করতে পারলেও আওয়ামী লীগের জন্য সরকারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চ। ইতোমধ্যে মঞ্চ এবং মঞ্চভুক্ত দলগুলোর পক্ষ থেকে পৃথকভাবে ভোটারদের ভোট বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চলছে। ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত যদি এই সরকার টিকে থাকতে পারে, তাহলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে এই একতরফা নির্বাচনের প্রতি তাদের চূড়ান্ত অনাস্থা প্রকাশ করবে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়াটাই তো সবচেয়ে বড় অনাস্থা।
জানা গেছে, প্রচারণার শুরু থেকে ভোট পর্যন্ত সময়কে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য ‘মোক্ষম সময়’ হিসেবে বিবেচনা করছে বিএনপি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনের মতো নেতাকর্মীদের জমায়েতের কর্মসূচি করতে না পারলে হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী হরতালের পর চলতি সপ্তাহের শেষ দুদিন অথবা শেষ দিন হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে সেটা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণের ওপর নির্ভর করবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
+ There are no comments
Add yours