আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ১৬ প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এসব প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার করেছে।
সংস্থাটির তদন্তে এসব চিত্র উঠে এসেছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান ফুজিয়ান এক্সপোর্ট কোম্পানির নামে মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে ৮৪ লাখ ৬ হাজার শলাকা ওরিসসহ বিদেশি সিগারেট আমদানি করে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওশান ট্রান্সপোর্ট লাইন। এলসি বা টিটির কোনো ধরনের ব্যাংকিং লেনদেন ছিল না এই অ্যাসাইনমেন্টে।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এ ধরনের অনিয়ম করে আসছে একটি চক্র। তাই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সিঅ্যান্ডএফের বাইরে কোনো এজেন্ট পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় থাকলে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
শুধু এসব সিন্ডিকেটই নয়, এমইটি এগ্রোফুড কোম্পানি কোনো ধরনের পণ্য রপ্তানি না করে শুধু সেলস কন্ট্রাকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রপ্তানি প্রণোদনার প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর থেকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা রেমিট্যান্স হাউসের মাধ্যমে এনে পাচার করেছে বলে শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ছাড়া কাকরাইলের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান এশিয়া ট্রেডিং শুধু ২০২২ সালেই ১৩৯২টি বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ২৮২ কোটি ৭৮ লাখ ২৬ হাজার ৯২৫ টাকা পাচার করেছে।
রাজধানী উত্তরার নিগার প্লাজার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইলহাম। তারা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লাইমেক্স শিপার্স লিমিটেডের মাধ্যমে ৩৮টি বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৯১৪ টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। এ ছাড়া আরও ৪৭ লাখ টাকা অর্থ পাচারের চেষ্টা করেছিল।
শুল্ক গোয়েন্দাদের তৎপরতার কারণে এই টাকা পাচার করতে না পারলেও বড় অঙ্কের ওই অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার করার প্রমাণ তদন্ত প্রতিবেদনে উঠেছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য অনুমোদন চেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। রাজধানীর উত্তরা-৯ সেক্টরের প্রতিষ্ঠান সাবিহা সাইকি ফ্যাশন ৯৪টি বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে ২৮ কোটি টাকা পাচার করেছে।
প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে ২০২১ সালে চারটি বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে। এই জালিয়াতিতে ধরা না পড়ায় ২০২২ সালে ৯টি বিলে জালিয়াতি করে। ২০২৩ সালে ৮১টি বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে বিদেশে অর্থ পাচার করে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তদন্তে এসব ভয়াবহ জালিয়াতির প্রমাণ উঠে এসেছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাবিনা পাচার করেছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, জারা কালেকশন প্রায় ৩০ লাখ টাকা, আর এস সোসিং ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ফাতেমা ইন্টারন্যাশনাল প্রায় ৮০ লাখ টাকা, ফ্যাশন ক্রিয়েট অ্যাপারেল ৮৪ লাখ ৬ হাজার ১০০ টাকা, সিয়াম এন্টারপ্রাইজ ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯১৭ টাকা, নিউ ইউর চয়েস ফেব্রিক্স ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫২৮ টাকা, সাদ ফ্যাশন ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, সামিট ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল ৩৩ লাখ টাকা এবং অ্যাপারেল অপশন পাচার করেছে ১৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া আজিজ এন্টারপ্রাইজসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের বিষয়টি চলমান রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা সূত্র।
+ There are no comments
Add yours