মিলাদ মুদ্দাচ্ছির: সংসদীয় আসন (২৮০), চট্টগ্রাম ০৩, সন্দ্বীপে প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী সহিংসতায় ভীত সন্ত্রস্ত ভোটারেরা।
উসকানিমূলক উক্তি করে নিরাপত্তা নিয়ে শংখা প্রকাশ ও ভোট প্রদানে অনিহা প্রকাশ করে ভোটারেরা, বিশেষ করে নারী ভোটারেরা অধিক উদ্বিগ্ন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর থেকেই সন্দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে সহিংসতার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এই সহিংসতা নির্বাচনী পরিবেশের ওপর কি প্রভাব ফেলছে, ভোটাররা কতটা অনিরাপদ বোধ করছেন – এসব প্রশ্ন নিয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলে শোনা গেল এরকমই কিছু উক্তি।
এবারের সংসদ নির্বাচনের চট্টগ্রাম ৩, সন্দ্বীপ আসনে বিভিন্ন দল থেকে মোট আটজন প্রার্থীর মধ্যে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা ও অন্যজন আওয়ামী লীগের পেশাজীবি সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাক্তার জামাল উদ্দীন চৌধুরী।
গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরু হতে না হতেই – সন্দ্বিপের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাক্তার জামাল উদ্দীন চৌধুরীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।
গত দিন গুলোতে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও গতকাল ২৪ তারিখ ঘটেছে একাধিক সহিংসতা ও রক্তপাতের ঘটনা।
ঈগল পাখি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ডাক্তার জামাল উদ্দীন চৌধুরীর সমর্থনে কাজ করা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান “মাকসুদুর রহমান ফুলমিয়া ও তার ছেলে মাহমুদূর রহমান মুন্নার” উপর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক সাংসদ মাহফুজুর রহমানের কর্মীদের পরিকল্পিত ও অতর্কিত হামলার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা তার পরিবার, একই দাবী করেছে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাক্তার জামাল উদ্দীন চৌধুরী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হামলার শিকার সাবেক চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান ফুলমিয়া স্বর্ণদ্বীপ ফাউন্ডেশন হসপিটালে এবং তার ছেলে মাহমুদুর রহমান মুন্না সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হামলার শিকার ব্যক্তিদের রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
অত:পর ঐ ঘটনার জের ধরে, একইদিন মেহেদী নামে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর এক কর্মীকে হামলার চেষ্টা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা। গত ১৯ শে ডিসেম্বরেও মুছাপুর আলীমিয়ার বাজারে দুইপক্ষের মধ্যে সহিংসতা ঘটেছে। ওই ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।
আবার, গত ২৩ শে ডিসেম্বর পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক দ্বারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক যুবলীগ নেত্রী কুলসুমা আক্তার সুমির উপর হামলার ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। গণমাদ্ধমকে সুমি জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক হওয়ায় উসিলা করে আমার উপর হামলা করেছে নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা।
সন্দ্বিপ থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব কবির হোসেন বলেন, বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত একটি ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। কিন্তু ২৪ তারিখের রক্তপাতের ঘটনায় এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করব। তিনি আরও বলেন, যে কোন সহিংসতার খবরে আমরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছি।
সংগঠিত সকল ঘটনায় পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্যনীয় ও ইতিবাচক ছিল বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।
এই ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা সীতাকুণ্ড সার্কেল এএসপি নাইহানুল বারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যের সবটুকু চেষ্টা করছি এবং করব। যে কেউ আইনী প্রতিকার চাইলে আমরা সেবা দিতে প্রস্তুত। আইনের কাছে সবাই সমান।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সহিংসতার বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব খোরশেদ আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকটি বিষয় আমাদের নজরে আসছে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করব। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে কাজ করতে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
উৎসবমুখর একটা নির্বাচনের যে আশা ভোটারদের ছিল – এসব হামলার খবরে কি ভোটাররা উদ্বিগ্ন ? কতটা নিরাপদ বোধ করছেন তারা এই পরিস্থিতিতে? জানতে কথা বলেছিলাম বেশ কয়েকজনের সাথে।
সন্দ্বীপের একটি ইউনিয়নের ভোটার তাসলিমা আক্তার। পেশায় চাকরিজীবী। আর কয়েকদিন পরেই নির্বাচন, তাই ভোটার হিসেবে নিজের ভোটটা দেয়ার উৎসাহ ছিল তার মধ্যে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই যেভাবে সহিংসতার খবর দেখে তিনি বলছেন, তিনি আতঙ্কিত বোধ করছেন।
+ There are no comments
Add yours