পঞ্চম শ্রেণি পাস করেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পৌনে দুইশত শিক্ষর্থীর। নদী গর্ভে হওয়ায় ইউনিয়নটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছন্ন।
ফলে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে লোকালয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা অনেকটাই দুষ্কর এই চরের শিক্ষার্থীদের। তবে অভিভাবকরা সন্তানদের লেখাপড়া করানোর ইচ্ছে থাকলেও স্কুলে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি নেই। তাই চাইলেও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা সম্ভব না। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, চরে শিক্ষার হার কম। ঝড়ে পড়ার হার বেশি। চরের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ধরে রাখতে দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে একের অধিক শাখা খুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
জানা গেছে, নয়টি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন। ইউনিয়নটিতে ৮টি প্রাথমিক, একটি জুনিয়র প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জুনিয়র প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। এ বছর নয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ৩৪১ জন শিক্ষার্থী। আর ইউনিয়নজুড়ে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়ায় সেখানে ভর্তি হওয়াটা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে সোনার হরিণ পাওয়ার মতো।
তবে বিগত বছরগুলোতে ক্লাসে শিক্ষার্থী ভর্তিতে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। তাই চরের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে ২০৫ জন শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কিন্তু এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি অনুমতি না থাকায় বেধেছে বিপত্তি। ফলে পৌনে দুইশ শিক্ষার্থীর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষার্থী রয়েছে চর আষাড়িয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে ৫৫ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। শিক্ষার্থীদের জায়গা থেকে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে দিয়াড় মানিকচক পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির দিক থেকে নাজুক অবস্থা রযেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। সে হিসেবে এ বছর রাজশাহী জেলায় ৭৪ হাজার ৯৪১ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। তারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হবে। রাজশাহীর ১ হাজার ৫৭টি সরকারি ও ৮৭৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়।
রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। তবে পদ্মার চর আষাড়িয়াদহতে ছাড় দেওয়ার কথা রয়েছে। তারা নিজ ব্যবস্থাপনায় ক্লাসের শাখা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিতে পারবেন। এতে করে শিক্ষক প্রয়োজন হবে। তবুও শিক্ষক সঙ্কট হওয়ার কথা না, কারণ এ বছর থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা বিভাগ নেই। ফলে ওই শিক্ষকরা ক্লাস নিতে পারবেন। চরের বিষয়টি আমরা দেখব।
+ There are no comments
Add yours