টানা এক বছর নানামুখী কর্মসূচি পালন করলেও বিএনপির আন্দোলনে এখনো চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। সাধারণ মানুষকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত ও কেন্দ্রবিমুখ করতে দুই সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে।
এ পর্যায়ে এসে দলটি পশ্চিমাদের ওপর নির্ভর করতে চাইছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির হাইকমান্ড মনে করেন, রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভোট আসলে একটি প্রহসন।
সুতরাং এ নির্বাচন কোনোভাবেই পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। যদিও সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বারবার এ নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য জোর দেওয়া হয়েছে।
ভোট বর্জনের আহ্বানে ভোটের আগে দুই দিনের হরতাল দিলেও এই কর্মসূচি ঘিরে অন্য কোনো পক্ষকে সহিংসতা সৃষ্টির সুযোগ দিতে চায় না বিএনপি। তাই ভোটের দিন কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষে না জড়াতে দলের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি মনে করে, এবার কোন প্রক্রিয়ায় কী ধরনের নির্বাচন হচ্ছে—জনগণের কাছে তা একেবারেই স্পষ্ট। ফলে বিএনপির ভোট বর্জনের আহ্বানে মানুষ ব্যাপকভাবে সাড়া দেবে। সরকার ও সরকারি দল জোরজবরদস্তি না করলে এই নির্বাচনে ৫ শতাংশের কম ভোট পড়বে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন হলেও তা ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। এর অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ভিসা নীতি কার্যকর করেছে।
এমন অবস্থায় একটি ‘ভোটারবিহীন, প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন হলে পশ্চিমাসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে এবার তা আর গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, বিএনপিবিহীন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে সরকার যে ডামি-স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে ভোট করছে, বিদেশিরা সে সম্পর্কে অবগত। তা ছাড়া গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা পশ্চিমা দেশগুলোও এবার প্রথমবারের মতো ভিন্নভাবে বাংলাদেশকে দেখতে চাইছে।
তাই নির্বাচনী নাটকের পর যুক্তরাষ্ট্র কঠোরভাবে ভিসা নীতির প্রয়োগ এবং ধাপে ধাপে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এজন্য নির্বাচনের পর কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নেতারা বলছেন, ভোটের পর নিষেধাজ্ঞাসহ অন্য পদক্ষেপ এলে সে অনুযায়ী তখন কঠোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে চেপে ধরার চেষ্টা করা হবে, যাতে দাবি আদায় করা সম্ভব হয়। তাই নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ভোটের পরে পশ্চিমা বিশ্বের নানামুখী পদক্ষেপের প্রত্যাশায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
এদিকে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী অবস্থা মূল্যায়ন করতে কয়েক মাস ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন দেশটির ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সদস্যরা।
জানা যায়, ওই বৈঠকে নির্বাচন বয়কটের কারণ, নির্বাচনী পরিবেশ এবং চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে অবহিত করে বিএনপি। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার সফররত কমনওয়েলথ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গেও বৈঠক করেছে বিএনপি।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। অন্যদিকে কমনওয়েলথ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের নেতৃত্ব দেন টিম লিডার জ্যামাইকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওরেট ব্রুস গোল্ডিং। জানা গেছে, বৈঠকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ‘একতরফা’ আখ্যা দিয়ে তা বয়কটের কারণ এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে ভোট হতে যাচ্ছে, তা তুলে ধরে বিএনপি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এই সরকারকে বুঝতে হবে, ২০২৪ আর ২০১৪ সাল এক নয়। সরকার যদি মনে করে একটি ভুয়া-ধাপ্পাবাজির ভোট করে তারা আবার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করে নেবে, এটা কোনো দিন হবে না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে কী হচ্ছে, তা শুধু দেশের জনগণই নয়, আন্তর্জাতিক তথা গণতান্ত্রিক বিশ্বও ওয়াকিবহাল। সুতরাং প্রহসনের নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ এবার আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। এমন নির্বাচন হলে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি, একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশে পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা চাই, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশে পরিবর্তন আনবে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।
+ There are no comments
Add yours