২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন করেছিল দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।
গঠনতান্ত্রিকভাবে তিন বছর পরপর এই সম্মেলন হওয়ার কথা। তবে সাত বছর পার হলেও সপ্তম জাতীয় সম্মেলন হয়নি। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতা মারা গেছেন। নানা কারণে বাদ পড়েছেন কেউ কেউ।
সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ১৩০টির মতো পদ শূন্য হয়ে আছে। শুধু তা-ই নয়, সাত বছরে কেন্দ্রীয় কমিটির সভা হয়েছে মাত্র একবার। ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই সভার পর কেটে গেছে পাঁচ বছর।
শুধু কেন্দ্র নয়, জেলা-উপজেলাসহ সব স্তরেই স্থবির হয়ে আছে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের আগে সংগঠন গোছানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিপূর্ণভাবে তা করতে পারেনি দলটি। ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অর্ধশতাধিক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। অধিকাংশ জেলায় আংশিক আহ্বায়ক কমিটি হলেও দীর্ঘদিনেও সম্মেলন ও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। কমিটি গঠনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের তৎপরতা কিংবা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের কারণে প্রবল হয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই ওই কমিটির সভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠু মারা যান। পরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান। এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ১৯ জুন জাফর আলীকে আহ্বায়ক ও জাহান্দার আলীকে সদস্য সচিব করে মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়।
২০২০ সালে আবার সেই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয় ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে আবার জেলার সব উপজেলা ও পৌর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে জেলা কমিটি পুনর্বহাল হলেও মাদারীপুরে পাঁচটি উপজেলা এবং চারটি পৌরসভায় বিএনপির কোনো কমিটি নেই।
বিএনপির নোয়াখালী জেলা কমিটি হয়েছে ২০১৭ সালে। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে সেই কমিটির মেয়াদ। ২০২০ সালে এই জেলার হাতিয়া উপজেলা বিএনপির কমিটি হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো পরিচিতি সভা হয়নি। সমন্বয় না থাকায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো কর্মসূচিও করেন না।
বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা, উপজেলা ও পৌর কমিটির মেয়াদ দুই বছর। কিন্তু অধিকাংশ জেলা-উপজেলা কমিটির মেয়াদ ৩ থেকে ১০ বছরে গড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে কাটছে দীর্ঘ সময়। এ অবস্থায় সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন কিংবা শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিতে পারছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা। তাদের দাবি, হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতনসহ ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সংগঠন গোছানোর কাজটি হয়ে উঠছে না।
জানা গেছে, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯ পদের মধ্যে বর্তমানে শূন্য আছে পাঁচটি। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যানের ১৩টি, উপদেষ্টা ১৫টি, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকসহ প্রায় একশর মতো পদ শূন্য হয়ে আছে।
জানা গেছে, মো. শামসুল হককে আহ্বায়ক ও মো. গুলজার হোসেনকে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করে ২০২০ সালে জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। শামসুল হক মারা যাওয়ায় গত বছরের জানুয়ারি গুলজার হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়। ৩ মাসের জন্য গঠিত ওই আহ্বায়ক কমিটি এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
বরং কমিটি গঠনের ১০ মাস পর বর্ধিত সভা করে দুই বছর আগে পাঁচটি উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হয়। এসব কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন পদবঞ্চিত অনেক নেতা। তাদের দাবি, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন এবং গুলজার হোসেন নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করেছেন।
জানা গেছে, দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামোর কারণে অনেক জেলায় নামকাওয়াস্তে পালিত হয় আন্দোলন কর্মসূচি। চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জসহ অন্তত ৪০টি সাংগঠনিক জেলায় কর্মসূচি পালনে শৈথিল্যের অভিযোগ পেয়েছে দলের হাইকমান্ড। এসব জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নানা কারণে কর্মসূচিতে সক্রিয় নন। তাদের কেউ বিদেশে, কেউ রাজধানীতে থাকেন। এ অবস্থায় দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাউন্সিলের মাধ্যমে সব সাংগঠনিক জেলা ও তৃণমূলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
+ There are no comments
Add yours