দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে ১১ হাজারের বেশি অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রাহকরা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) এসব অভিযোগ জমা হয়েছে।
এর মধ্যে এক বছরে ৭৬ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে। তবে বিটিআরসির অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া যথাযথ নয় বলে অংশীজনের মূল্যায়ন।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, অপারেটরগুলোর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটক। পাঁচটি অপারেটরের মধ্যে এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে রবি, এয়ারটেল ও বাংলালিংক। সেবার মান, ইন্টারনেটের গতি এবং ডাটা ভলিউম নিয়ে গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে।
বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের মোট অভিযোগ জমা পড়ে ১১ হাজার ৩৩৪টি। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ১৭০টি, টেলিটকের বিরুদ্ধে ২ হাজার ১৪৯, রবির বিরুদ্ধে ২ হাজার ৩৫, এয়ারটেলের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৮১২ এবং বাংলালিংকের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৯১টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর বাইরে স্কিটোসহ অন্যান্য অপারেটরের বিরুদ্ধেও ৮৭৭টি অভিযোগ এসেছে।
ক্যাটাগরিভিত্তিক এসব অভিযোগ জমা পড়ে সেবা গুণগত মান, ইন্টারনেট তথা ডাটার গতি ও ভলিউম, কল কেটে যাওয়া, প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড, ইনকামিং এবং আউটগোয়িং কল ও এসএমএস, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি), প্যাকেজ পরিবর্তন, কুইজ ও পুরস্কার, রিচার্জ বা বিলিং, সিম নিবন্ধন বা মালিকানা-সংক্রান্ত বিষয়ে। তবে প্রথম তিনটি কারণেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গ্রাহকদের।
অপারেটরগুলোর মধ্যে সর্বাধিক অভিযোগ গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। অবশ্য তাদের গ্রাহক সংখ্যাও অন্য অপারেটরদের তুলনায় বেশি। বিটিআরসির হিসাবে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ কোটি ২২ লাখ। গত বছর গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সেবার মান সংক্রান্ত। এ নিয়ে মোট ১ হাজার ৬২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের গতি সম্পর্কে ৩৬২টি, রিচার্জ বা বিলিং বিষয়ে ১৯২, কল বা এসএমএস-সংক্রান্ত ১৭১ এবং অন্যান্য বিষয়ে ২৬২টি অভিযোগ জমা পড়ে।
গ্রাহকদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন্স শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘গ্রামীণফোনের সব প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকদের প্রতিটি অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। গ্রাহকসেবার মান উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষের আস্থাভাজন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানে জিপির নানামুখী উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা নিরন্তর চলছে এবং চলবে।’
গ্রাহক অভিযোগে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক। মাত্র ৬৪ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক-সমৃদ্ধ অপারেটরটির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ২ হাজার ১৪৯টি। টেলিটকের বিরুদ্ধে কোন কোন ক্যাটাগরিতে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়টি বিটিআরসি থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটা গ্রুপ এবং ভারতীয় এয়ারটেল লিমিটেড বর্তমানে ‘রবি’ নামে পরিচালিত হচ্ছে। রবি গ্রাহকদের মোবাইল নম্বর ০১৮ এবং এয়ারটেল গ্রাহকদের নম্বর ০১৬ দিয়ে শুরু হয়। তবে নেটওয়ার্ক এবং গ্রাহকসেবা বিষয়ে উভয় ধরনের গ্রাহকদের ২০১৬ সাল থেকে সেবা দিচ্ছে রবি। এর মধ্যে রবির গ্রাহকদের ২ হাজার ৩৫টি এবং এয়ারটেলব্যবহারকারীদের ১ হাজার ৮১২টি অভিযোগ জমা পড়ে।
বর্তমানে একই কোম্পানির অধীনে পরিচালিত এই দুই অপারেটরের বিরুদ্ধে জমা পড়া অভিযোগ যোগ করলে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৪৭টিতে দাঁড়ায়। রবির ক্ষেত্রে সেবার মান সম্পর্কে ৬০৭টি, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভিএএস) নিয়ে ২৬১টি, ইন্টারনেট ডাটার গতি বিষয়ে ১৬৬টি এবং ডাটা ভলিউম নিয়ে ১১৩টি অভিযোগ জমা পড়ে। অন্যদিকে এয়ারটেলের ক্ষেত্রে সেবার মান নিয়ে ৬৯৫টি, ইন্টারনেটের গতি নিয়ে ৩৪৮টি, ডাটার ভলিউম সম্পর্কে ১১৩টি এবং ভিএএস-সংক্রাক্ত বিষয়ে ১৩৬টি অভিযোগ জমা পড়ে।
প্রায় ৪ কোটি ৩৪ লাখ গ্রাহকের অপারেটর বাংলালিংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ১ হাজার ২৯১টি। এ মধ্যে সেবার মানে ৪৬৩টি, ডাটার গতি নিয়ে ১১৪টি, ডাটার ভলিউমে নিয়ে ৮৩টি এবং ট্যারিফ সম্পর্কিত ৬৮টি অভিযোগ জমা হয়েছে।
বিটিআরসির অভিযোগ নিষ্পত্তি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী অভিযোগ ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার কথা। কিন্তু বিটিআরসিতে গ্রাহকদের অভিযোগ বছরের পর বছর পড়ে থাকে।
তাদের বলেছিলাম, বিটিআরসির নতুন কার্যালয়ে একটি অভিযোগ কেন্দ্র খোলার জন্য, যেখানে মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা থাকবে। তারা গ্রাহকদের ‘ওয়ান স্টপ সেবা’ দেবে। যেসব অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া জটিল বা অপারেটরগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি দরকার, সেগুলো নিয়ে সপ্তাহে আলাদা করে শুনানি হবে। কিন্তু এগুলো কিছুই হচ্ছে না। এখন তারা বলছে, ৭৬ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে। কিন্তু আসলেই কতটুকু করেছে, গ্রাহক সেই নিষ্পত্তিতে সন্তুষ্ট কি না, সেসব বিষয় তো স্পষ্ট নয়।’
+ There are no comments
Add yours