সঠিক তথ্য বের করে দেশের স্বর্ণকে হোয়াইট বা ফরমাল ইকোনমিতে আনতে পারলে জুয়েলারি শিল্পের অনেক সমস্যা সমাধান হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
শুক্রবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে ‘জুয়েলারি শিল্প বিকাশে অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, গোল্ড সেক্টরের অনেক কিছু ইনফরমাল ইকোনমিতে বা ব্ল্যাক মার্কেটে আছে। এগুলোর আগে সঠিক ডাটা বের করে দেশের গোল্ডগুলোকে হোয়াইট বা ফরমাল ইকোনমিতে আনতে হবে। তারপর সুন্দর পলিসি সাপোর্ট পেলে এই সেক্টরের বেশির ভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
রপ্তানির বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, গোল্ড মার্কেটের সম্ভাবনা অনেক হলেও, এখনো রপ্তানির দিকে যাওয়ার মতো হয়নি। আগে ডমেস্টিক মার্কেট ভালো করে গোছাতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাজার গোছানোর পরে রপ্তানির দিকে গেলে এই সেক্টর টেকসই হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গোল্ড রিফাইনারি দেবার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, সরকার যখন এই সেক্টরে পলিসি তৈরি করবে তখন এই গোল্ড রিফাইনারির বিষয়টাও থাকবে। তখন এই রিফাইনারি সেক্টরও নীতির দিক থেকে শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি সরকার যখন কোনো পলিসি তৈরি করে, সেখানে লক্ষ্য রাখবেন কোনো একক প্রতিষ্ঠান যেন একা সকল সুবিধা না পায়। সে জন্য এই সেক্টরে যারা থাকবেন তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে নেবেন যাতে সবাই সমানভাবে সমান প্রতিযোগিতায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, গোল্ড সেক্টরে যে সকল সমস্যা ছিল, তা সব কিছু ঠিক হয়েছে সায়েম সোবহান আনভীর সাহেবের জন্য। আগে এই সংগঠনটি এতটা শক্তিশালী ছিল না। পাশাপাশি পলিসিগত দিক থেকে সালমান এফ রহমান যদি উদ্যোগ নেন তাহলে জুয়েলারি শিল্প অনেকটা এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি এই সেক্টরকে এগিয়ে নিতে হলে একটি ইনস্টিটিউশনের প্রয়োজন আছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমরা সব সময় বাণিজ্যের বিষয়ে রপ্তানি এবং আমদানির ডায়ভারসিফাইডের কথা বলি। এখানে বাজুসের করণীয় হবে গোল্ডের সকল ডাটা একত্রিত করা। যার মাধ্যমে কোনো নীতিমালা তৈরি এবং পরিকল্পনায় অনেক সুবিধা হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল। তিনি বলেন, গোল্ড অ্যান্ড জুয়েলারি শিল্পের রিকগনাইজেশন ছাড়া ঋণ পাওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে এই শিল্পকে আগে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
গোল্ড আমদানিতে রাষ্ট্রের উদারতার বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সুইজারল্যান্ড পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল্ড আমদানি করে এবং রপ্তানি করে। অর্থাৎ যত বেশি আমদানি হবে তত বেশি রপ্তানি হবে। এর মাধ্যমে এই সেক্টরকে আরও বেশি শক্তিশালী করা যাবে।
সেমিনারে বাজুস সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, জুয়েলারি শিল্পে ৪০ হাজার ব্যবসায়ী থাকলেও সব মিলিয়ে ৫ হাজার কারিগরও নেই এই সেক্টরে। এই সেক্টরে দক্ষ কারিগরের অভাব আছে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে ছোট জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে সমস্যা হয়। তাই এই সেক্টরকে এগিয়ে নিতে এই ছোট উদ্যোক্তাদের প্রতি সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।
+ There are no comments
Add yours