২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর সংস্থাটি জানতে পারে, ৪ মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার করেছে তারা। টাকা পাচারের মাধ্যম ছিল বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তথ্য অনুযায়ী, বছরে ৭.৮ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা) পাচার করছেন হুন্ডি ব্যবসায়ীরা।
চলমান ডলার সংকটের মধ্যে হুন্ডির তৎপরতা আরও বেড়েছে। এ সংক্রান্ত বেশকিছু অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে। কিছু অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় নিজেরা আইনি ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর শাঁখারীবাজারের ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন বড়ালের বিরুদ্ধে হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত নভেম্বরে সিআইডিকে চিঠি দেয় সংস্থাটি। অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, বাংলাদেশে বসবাস করলেও ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে টাকা পাচার করছেন।
সিআইডিকে দেওয়া চিঠিতে দুদক বলে, গোপন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চিত্তরঞ্জন বড়াল ঢাকার শাঁখারী বাজার এলাকায় শ্রী শ্রী কালাচাঁদ জিউ মার্কেটের ভিসা এজেন্ট উত্তম সমাদ্দারের সহযোগিতায় হুন্ডি ও মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠান। চিত্তরঞ্জন বড়াল ও তার স্ত্রী পাপিয়া বড়াল বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বৈত নাগরিক।
উভয় দেশে তাদের ব্যবসা রয়েছে। চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী ও মেয়ে ভারতে বসবাস করেন। তাদের সহযোগিতায় চিত্তরঞ্জন দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেন বলে তথ্য রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ছদ্মাবরণে অবৈধভাবে নিজেদের এবং অন্যদের অর্থ ভারতে পাচার তথা মানিলন্ডারিং কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালনা করেছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সরকারি চাকরিজীবী নন। তাই আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, নিউ কনসার্ন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও জয়নাল আবেদীন মোল্লা নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী। তিনি নিট ওয়্যার ব্যবসার নামে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড ও আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন। পরবর্তীতে ওইসব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এলসি খুলে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নেন। আর ঋণের টাকা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, হংকং ও স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচার করে আসছেন।
দুদক জানায়, ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনের টাকা পাচারের অন্যতম মাধ্যম অবৈধভাবে কাস্টমস বন্ডের সুবিধা ও কাস্টমস ডিউটি ফাঁকি দেওয়া। হংকং সিঙ্গাপুর ও ইউরোপে তার একাধিক অফশোর কোম্পানি আছে। যার মাধ্যমে তিনি প্রতিনিয়ত টাকা পাচার করেছেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামেও বিভিন্ন দেশে কোম্পানি ও একাধিক বাড়ি কিনেছেন। জয়নাল আবেদীন মোল্লা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে নারায়ণগঞ্জের সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ মৌজায় প্রায় ২০০ বিঘার ওপর জমি আছে।
+ There are no comments
Add yours