হতাশা ও ক্ষোভের মধ্য দিয়ে চলতে থাকা ১৪ দল এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। গত নির্বাচনের পর এ জোটের কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি। বিদ্যমান পরিস্থিতি জোটের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ১৪ দলের নেতারা।
১৪ দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামীতে ১৪ দলের জোটের অস্তিত্ব থাকবে কিনা এ প্রশ্নটি এখন সামনে চলে এসেছে। এ ব্যাপারে জোটের নেতাদের অনেকেই তেমন কোনো আশা দেখছেন না। এর জন্য তারা জোটের প্রধান দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন। শুধু ১৪ দলের জোটই নয়, এ জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যেও যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে অচিরেই কোনো কোনো দলের মধ্যে সংকট দেখা দিতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
১৪ দলের নেতাদের মতে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই ১৪ দলের সংকট ও জোটের দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব তৈরি হয়। তাদের অভিযোগ, জোট সঙ্গীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের উদাসীনতা ও গুরুত্বহীন বিবেচনা করে উপেক্ষা করা থেকে এ দূরত্ব বাড়তে থাকে।
আর এর মধ্য দিয়েই জোটের দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভের জন্ম নেয়। এটা গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির সময় আরও বড় আকার ধারণ করে। এতে জোট সঙ্গীদের হতাশা ও ক্ষোভ আরও বেড়েছে। আওয়ামী লীগের দূরত্ব রেখে চলা এবং জোট সঙ্গীদের হতাশা ও ক্ষোভ সব মিলিয়ে জোটকে অস্তিত্ব সংকটের দিকে নিয়ে গেছে বলে জানান নেতারা।
তবে এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ কোনো কথা বলতে চাচ্ছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৪ দলের এক নেতা জানান, যেহেতু জোটের অবস্থার উন্নতি বা জোটকে এগিয়ে নেওয়ার তেমন কোনো উদ্যোগ বা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, তাই এ ব্যাপারে কেউ আগ বাড়িয়ে কথা বলে দায়ভার নিজের ওপর নিতে চায় না।
এদিকে ১৪ দলের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যে দূরত্ব দেখা যায় তা জোট পরবর্তী অন্য কোনো সময়ে দেখা যায়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে ১৪ দল গঠন হয়। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ বেশ কিছু কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিয়ে এ জোট যাত্রা শুরু করে।
একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের অঙ্গীকারও ছিল এ জোটের। গত তিনটি নির্বাচন এবং প্রথম ও দ্বিতীয়বারের সরকারে জোট সঙ্গীরা থাকলেও তৃতীয় ও চতুর্থবারের (বর্তমান) সরকার আওয়ামী লীগ এককভাবে গঠন করে। জোটের রাজনীতিতে এ বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করছেন না ১৪ দলের নেতারা। সর্বশেষ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে জোট সঙ্গীদের যে কয়টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয় সেটাও তারা প্রত্যাশা করেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ যে একলা চল নীতি গ্রহণ করেছে গত নির্বাচন এবং সরকার গঠনের পর সেটা আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে ১৪ দলের ওই নেতারা মনে করছেন।
সূত্রগুলো আরও জানায়, নির্বাচন এবং সরকার গঠনের পর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে যেতে চললে জোটের কোনো বৈঠক বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট সঙ্গীদের আনুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ হয়নি। জোটের দলগুলো তাদের বক্তব্য তুলে ধরারও কোনো সুযোগ পায়নি। এ বিষয়টিতেও জোটের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে জোটের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও ১৪ দলের প্রয়োজনীয়তা এখনও আছে বলে জোট নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট নেতাদের বৈঠক হলে জোটের সমস্যা-সম্ভাবনার বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে তাদের ধারণা।
এদিকে এ জোটের কোনো কোনো দলের নেতারা মনে করছেন, ১৪ দলের বর্তমান যে অবস্থা এভাবে চলতে থাকলে জোটভুক্ত দলগুলো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৪ দল যখন গঠন হয় তখন এ দলগুলো রাজনৈতিকভাবে কম বেশি তৎপর ছিল। বাম ফ্রন্ট ও ১১ দল নামে দুটি জোটে থেকে এ দলগুলো আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলে ও রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে। তাছাড়া প্রতিটি দল কম বেশি নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতিতে তৎপর ছিল।
এখন এ দলগুলোর দুয়েকটি ছাড়া অধিকাংশেরই কোনো তৎপরতা নেই, নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। যেসব দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা আছে সে দলগুলোও কর্মসূচির অভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। এতে দলের অভ্যন্তরীণ সংকট দেখা দিচ্ছে। নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। অতীতে ১৪ দলভুক্ত কয়েকটি দল একাধিক ভাঙনের মুখোমুখিও হয়েছে। আগামীতে কোনো কোনো দলের মধ্যে এমন সংকটও দেখা দেখা দিতে পারে। পরিবর্তন আসতে পারে বর্তমান নেতৃত্বেরও। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ১৪ দলের জোটে সংকট, কোনো কোনো দলে সংকট, নেতৃত্বের পরিবর্তন এ রকম ঘটনার মতো কিছু ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে এ জোটের দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
+ There are no comments
Add yours