আনাড়ির হাতে অস্ত্রের লাইসেন্স : ঘটছে দুর্ঘটনা

Estimated read time 1 min read
Ad1

কোনোরকম প্রশিক্ষণ না থাকলেও অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। সরকারের কাছ থেকে অনুমতি (লাইসেন্স) নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করলেও ন্যূনতম ব্যবহারিক জ্ঞান নেই অনেকেরই। এমনকি এগুলো কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়—সে সম্পর্কেও অধিকাংশের নেই স্পষ্ট ধারণা। এ অজ্ঞতার কারণেই লাইসেন্সধারীদের বৈধ অস্ত্রে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।

জানা গেছে, দেশে ৭০ হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। ডিজিটাল আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের তথ্যানুযায়ী, এসব অস্ত্রের মধ্যে ডাটাবেজে এখন পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে ৫০ হাজার অস্ত্রের তথ্য। এর মধ্যে ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স আছে ৪৫ হাজার। বাকিগুলো আর্থিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে।

জানা গেছে, দেশে সামরিক বা বেসামরিক যে কোনো নাগরিককে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট, ১৯২৪ সালের আর্মস রুলস আইন এবং আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬ অনুসরণ করা হয়।

একজন ব্যক্তি শর্ত মেনে অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেন। সেই আবেদনটি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) তদন্ত করে আবেদনকারীর দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেয়। এরপর জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) অনুমোদন দিয়ে সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় অনাপত্তিপত্র দিলে জেলা প্রশাসক সাক্ষাৎকার নিয়ে ওই আবেদনকারীর নামে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করেন। আবেদনকারীর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার আগে তাকে ন্যূনতম প্রশিক্ষণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।

যদিও লাইসেন্স নেওয়ার সময় অন্যান্য শর্তের সঙ্গে আবেদনকারীর অস্ত্র পরিচালনা সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞান আছে কি না, সেই প্রশ্নে ইতিবাচক উত্তর দিতে হয়! কিন্তু অস্ত্র চালানোর সেই প্রাথমিক জ্ঞান কোথায় পেলেন—সেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

আবেদনকারীর শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য, আবেদন করা অস্ত্র এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞান ও অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষাৎকার নেন। তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার পর লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। তবে শারীরিক, মানসিক সামর্থ্য এবং অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে যেসব তথ্য দেওয়া হয়, তা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোনো বিশেষজ্ঞ যুক্ত থাকেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, লাইসেন্স পাওয়ার পর সেই অস্ত্র দিয়ে কোনো অঘটন ঘটলে এর দায় লাইসেন্সধারীর। লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে তা বাতিলসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে ন্যূনতম ব্যবহারিক জ্ঞান ছাড়া অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া এবং পরবর্তীকালে অস্ত্র কিনে ব্যবহারের বিদ্যমান ব্যবস্থাটি ত্রুটিপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট নীতিমালায়ও বিষয়টি অস্পষ্ট। কারণ মুখস্থ কিছু প্রশ্নে উত্তর দিয়ে লাইসেন্স পেয়ে অস্ত্র কেনেন লাইসেন্সধারী। এরপর সেই অস্ত্র কীভাবে চালাতে হবে, নির্ধারিত অস্ত্রটির সেফটি ফিচার কী, রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে করতে হয়, সেগুলো জানা জরুরি। সরকার শুধু লাইসেন্স দিয়েই দায় সারছে।

জানা গেছে, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণে প্রচলিত অস্ত্রগুলোর ব্যবহার হাতেকলমে শেখানো হয়। এ ছাড়া প্রতি বছর ফায়ারিং প্র্যাকটিস হয়। তারপরও রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য সময় দুর্ঘটনা ঘটে। যাদের কোনো প্রশিক্ষণ বা হাতেকলমে জ্ঞান ছাড়াই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়, তাদের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকে।

আগ্নেয়াস্ত্রের নীতিমালায় বলা আছে, ‘শুধু আত্মরক্ষা ও টার্গেট প্র্যাকটিসের উদ্দেশ্যে গুলি ব্যবহার করা যাবে।’

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতি বছরই বৈধ অস্ত্রের গুলিতে আহত বা নিহত হওয়ার মতো গুরুতর ঘটনা ঘটছে। গত বছর ৩০ জুলাই বেইলি রোডের একটি ফ্ল্যাটে মানিক নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে অস্ত্রের মালিক ইসমাইল হোসেন বাচ্চু দাবি করেছিলেন, অস্ত্রটি নাড়াচাড়া করতে গিয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে। কীভাবে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়, তা তিনি জানতেন না।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার বিষয়ে ২০১৬ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় নির্ধারিত ফরমে উত্তরগুলো লিপিবদ্ধ করবেন। এ ফরমে ১৬টি বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়। ক্রমিক ১ থেকে ৮ পর্যন্ত আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, বয়স, পেশা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা)। এরপর ধারাবাহিকভাবে আবেদনকারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, অস্ত্র পরিচালনা সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞান, অস্ত্র আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে ধারণা, আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপদ হেফাজতে সংরক্ষণ করার জ্ঞান ও সক্ষমতা, আগ্নেয়াস্ত্রের আবশ্যকতা, আচার-আচরণ ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours