বাংলাদেশ রেলওয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে খুলনা বিভাগ ও বৃহত্তর ফরিদপুর নিয়ে গঠিত রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল। সারা দেশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগের একমাত্র পথ ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ইশ্বরদী জংশন। তারপর ছাড়িয়ে গেছে বিভিন্ন জেলায়।
বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার হলেও ইশ্বরদী জংশন ঘুরে যাওয়ার জন্যে অতিরিক্ত ১১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আর অতিরিক্ত সময় লেগে যায় প্রায় চার ঘণ্টা।
এ জন্য একদিকে রেলওয়ে আর্থিক ক্ষতি ও শিডিউল জটিলতায় পড়ছে আর অন্যদিকে যাত্রীদেরও অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।
তবে অর্থায়ন জটিলতায় অগ্রগতি না হওয়ায় এক বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সেই সময়কাল বাড়ানো হয়। পরে সময় আরও বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে সেটি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা ৪ ধারায় নোটিশ দিচ্ছি। ৪ ধারার নোটিশ শেষ হলে ভূমি মালিকদের আপত্তি থাকলে তা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপত্তি দেবেন। পরে তা শুনানি শেষে নিষ্পত্তি হবে। দ্রুত অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে জানান সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক।
আর বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আফসানা ইয়াসমিন বলেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথের জন্য বগুড়া অংশে ৪৭৯ দশমিক ১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে ভূমি মালিকদের ৪ ধারায় নোটিশ দেওয়া হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভূমিমালিকদের আপত্তি গ্রহণ করা হয়েছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে যৌথ তদন্ত শুরু হয়েছে। বগুড়া অংশের ৫৬ মৌজার মধ্যে ১৪টিতে যৌথ তদন্ত শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের নকশা ও পরামর্শক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ কাজে পৌনে ছয় বছরে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা।
এদিকে এ প্রকল্পে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্পের ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকাই ঋণ হিসেবে দেবে ভারত। বাকি ২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার।
সূত্র বলছে, এলওসির আওতাভুক্ত হওয়ায় প্রাথমিক ঠিকাদার নির্বাচন করবে ভারতের ঋণদাতা এক্সিম ব্যাংক। ওই ব্যাংক ঠিকাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা দিলে দরপত্র আহ্বান করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ জন্য গত বছর অক্টোবরে ঠিকাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকার জন্য ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও এখনও জবাব আসেনি। ফলে প্রকল্পটি কবে শেষ হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বাংলানিউজকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ কাজ চলমান আছে। বাকি কাজ অর্থায়নের ওপর নির্ভর করছে। অর্থায়ন পেলে কাজ শুরু হবে। ভারতের এক্সিম ব্যাংককে মেইল করা হয়েছে অর্থায়নের বিষয়ে।
প্রসঙ্গত, এ প্রকল্পে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন থেকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রানীরহাট পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হবে। এর মধ্যে বগুড়া স্টেশন থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশনের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। রানীরহাট স্টেশন থেকে কাহালু স্টেশনের দূরত্ব ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। রেলওয়ে বলছে, রেললাইন ছাড়াও ১৬ কিলোমিটার লুপ লাইন এবং বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন আটটি রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে। সেগুলো হলো সদানন্দপুর, কৃষাণদিয়া, রায়গঞ্জ, চান্দাইকোনা, শেরপুর, আড়িয়াবাজার, রানীরহাট ও কাহালু। এর মধ্যে রানীরহাট ও কাহালুতে জংশন হবে। এই রেলপথ হলে বছরে কয়েক কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় হবে।
+ There are no comments
Add yours