
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের এমডি পদের জন্য তদবিরের জন্য হিলারি ক্লিনটন ফোন করেছিলেন। ২০ মিনিট ধরে ফোন ছাড়ে না। একবার নয় দুইবার। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি এলো। অনেকেই এলো। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে একটা কথা বলেন, এই এমডি পদে কী মধু আছে?
শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষ্যে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
এই প্রশ্নের উত্তর কখনো পেলাম না। একটা বড় দেশ থাকে প্রমোট করে। সেই দেশের অ্যাম্বাসেডর আমার অফিসে আছে। আমার অফিসের কর্মকর্তাকে ধমক দিয়ে বলে, এমডি পদ না থাকলে সেতুর অর্থ বন্ধ হয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) সরকারের বিরুদ্ধে, অর্থমন্ত্রী বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মামলা করলেন। সে মামলায় তিনি হেরে গেলেন, আরও ক্ষেপে গেলেন। আর অ্যাম্বাসেডরদের আনাগোনা তো চলছে। বারবার একই কথা শোনায়। এরপর একজন আন্ডার সেক্রেটারি এলেন। তিনি এসে এমন কিছু কথা বললেন আমি সেদিনই তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি বলে দিলাম যে, আমেরিকা থেকে আর কেউ এলে আমি দেখা করবো না। আমি আর দেখা করিনি।
সরকার প্রধান বলেন, আমাদের হুমকি দেওয়া হলো এমডির পদ না থাকলে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাবে। হিলারি ফোন করলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি এলো। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম, এই এমডি পদে কী মধু আছে?
শেখ হাসিনা বলেন, কী যে মধু আছে, এখন বুঝতে পারবেন। যখন লেবাররা মামলা করে তখন বোঝা যায়। যখন ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার মামলা হয়। যখন দুর্নীতির মামলা হয়। তখন আসতে আসতে বের হয়ে যাবে, ওই এমডি পদে কী মধু আছে। আর গ্রামীণ ব্যাংকের যখন অডিট রিপোর্ট আসবে, আরও তথ্য বের হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনূস কেন এমডি পদে থাকতে পারল না এ জন্য হিলারির নির্দেশে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করল। একে একে অনেকে বন্ধ করে দেয়। আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক না থাকলে পদ্মা সেতু করা যাবে না। আমি বললাম, কেন পারব না। একমাত্র মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি করে দেব। আমাদের দেশের কেউই পাশে ছিল না। একমাত্র বাংলাদেশের মানুষ ছিল। জ্ঞানীগুণী সবাই বলেছিল, পারবেন না। টাকা কোথায় থেকে আসবে। আমি বলেছিলাম, নিজের টাকায় করবো।
সরকার প্রধান বলেন, বলা হলো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি বললাম, প্রমাণ দেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এলেন। আমরা প্রমাণ চাইলাম। বলল, প্রমাণ আছে। কিন্তু দিতে পারল না।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা সিদ্ধান্ত (নিজের টাকায় পদ্মা সেতু) বাংলাদেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন বুক উঁচু করে চলতে পারে। এই সেতু গর্বের। সুতরাং এটাকে টাকায় বিচার করার নয়।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে কথিত দুর্নীতির প্রমাণ চেয়েছিলাম আমি। মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছিল তারা, আমি করিনি। পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করেছি।
তিনি আরও বলেন, জাতির জনককে হত্যার পর জাতিকে মর্যাদাহীন করে দেওয়া হয়েছিল। খবরদারিটা আমাদের ওপর বেশি হচ্ছিল। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এখন আমরা বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গে চলছি। আগামী দিনে যত বাধাই আসুক, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভাপতিত্ব করেন। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতুর থিমসং প্রচার করা হয়। এছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রীর ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়।
 
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                            
 
                         
                 
                                     
                                     
                                     
                             
                             
                             
                                                         
                                
                         
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                
+ There are no comments
Add yours