আত্নগোপনে বাকলিয়ার বিতর্কিত কাউন্সিলর হারুন

Estimated read time 1 min read
Ad1

১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের বিতর্কিত কাউন্সিলর মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ গত ৫ আগস্ট থেকে আত্নগোপনে রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামে নিউ মার্কেট, বহদ্দারহাট ও মুরাদপুরে নিজ গ্রুপের সন্ত্রাসীদের দিয়ে দফায় দফায় হামলা করানোর সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।

স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এক সময়ের এই দাপুটে কাউন্সিলর ও ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক।

তিনি ছিলেন গত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আসা চট্টগ্রামের একমাত্র কাউন্সিলর। তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার সাহস করেননি এই ওয়ার্ডের কোন রাজনীতিবিদ। বিরোধী দলকে চাপে রাখা ছাড়াও নিজ দল আওয়ামী লীগের কোন অন্য গ্রুপগুলোকেও নূন্যতম রাজনীতি করার সুযোগ দেননি কাউন্সিলর হারুন।

সবশেষ ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্য হামলায় অংশ নেয় হারুনের নিয়ন্ত্রনে থাকা বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং চক্র। ১৮ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এনামুল হক মানিক, ছাত্রলীগ নেতা রুবেল এবং ভাতিজা ইমতিয়াজ আহমেদের নেতৃত্বে ৪ আগস্ট নিউ মার্কেটে সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রদের উপর।

ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা ও হারুনের ভাতিজা

ইতিমধ্যে হারুন অর রশিদকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ছয়টিরও বেশি মামলায় আসামী করা হয়েছে। যার কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্নগোপনে চলে গেছেন এই বিতর্কিত রাজনীতিবিদ।

এছাড়া ৫ আগস্ট থেকে টানা বেশ কয়েক দিন পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের বেশ কিছু জায়গায় চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ বিতর্কিত কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম এবং নুর মোস্তফা টিনুকে আশ্রয় দেন কাউন্সিলর হারুন।

হত্যা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ

২০১৯ সালের ১১ মে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার বজ্রঘোনার নিকটে মদিনা মসজিদ এলাকায় এক নারীকে ঘরে ঢুকে গুলি করা হত্যা করেন স্থানীয় সন্ত্রাসী ও আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত শাহ আলম।

ওই ঘটনার দিন শনিবার (১১ মে) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ওই এলাকার পেছনে কর্ণফুলী নদীর তীরে এক ‘কথিত’ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত হন অভিযুক্ত যুবক শাহ আলম।

অপরাধীকে আইনের আওতায় না এনে কেন বন্দুকযুদ্ধের ‘নাটক’ সাজিয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যা করা হয় সেটি নিয়ে সে সময় জনমনে প্রশ্ন উঠলেও পরিস্থিতির কারণ মুখ খুলতে সাহস করেনি কেউ।

তবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড দিয়ে গণমাধ্যমের সোচ্চার ভূমিকা শুরুর পর চট্টগ্রামের গণমাধ্যমগুলো শাহ আলম হত্যাকান্ডের পেছনের ঘটনা তদন্তে নেমে পড়েছে।

স্থানীয়দের সবার কাছে শাহ আলম ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুনুর রশীদের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এমনকি ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে হারুনুর রশীদের নির্দেশে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেন শাহ আলম। স্থানীয়দের মধ্যে বেশ কিছু বাসিন্দা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত শাহ আলম বুবলি আক্তার নামে ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে হত্যার পর তার রাজনৈতিক নেতা কাউন্সিলর হারুনুর রশিদকে ফোন দিয়ে বাঁচাতে বলেছিলেন। ওই সময় শাহ আলম এটি করা না হলে সে ইতিপূর্বে যত অপকর্ম করেছে সেগুলোর নির্দেশ দাতা হিসেবে হারুনুর রশিদের নাম গণমাধ্যম ও আইশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় নিজের অবস্থান নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়ে যান কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ। তিনি এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে তৎকালীন বাকলিয়া থানার বিতর্কিত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনের সহায়তা নেন।

ওসি নেজাম উদ্দীন সন্ত্রাসী শাহ আলমকে আটকের পরও শুধুমাত্র কাউন্সিলরকে বাঁচাতে ‘কথিত’ বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে হত্যা করেন। এই ঘটনাকে সাজানো সেটি ওই সময় জাতীয় দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনসহ বেশ কিছু দৈনিকে প্রচার হয়েছিল।

ঘটনার পর ওসি নেজাম উদ্দিন দাবি করেছিলেন, বন্দুকযুদ্ধে তিনিসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অথচ ওই ঘটনায় তাদের আহত হওয়ার কোন মেডিক্যাল সার্টিফিকেট চট্টগ্রাম পুলিশ সদর দপ্তরে জমা দেয়া হইয়নি বলে নিশ্চিত হয়েছে আমাদের প্রতিবেদক।

কিশোর গ্যাং নেতা নাঈম

এছাড়া বাকলিয়া থানা কালামিয়া বাজার এয়াকায় জামায়াত কর্মী ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দীন হত্যাকান্ডেও আছে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ।

২০১৫ সালে নির্বাচনে জেতার পর পূর্ব বাকলিয়ায় বিএনপি জামায়াতসহ সহ বিরোধী দলকে এক প্রকার কোনঠাসা করে ফেলেন এই কাউন্সিলর। এছাড়া আওয়ামী লীগের বাকি গ্রুপগুলোকেও নিজের সন্ত্রাসী বাহিনীকে দিয়ে নিজের অনুসারী বানিয়ে নেন।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি এবং সাবেক কাউন্সিলর জসিম উদ্দীন, সাবেক কাউন্সিলর ও প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসহাকসহ প্রভাবশালী নেতারা চাপে পড়ে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

জায়গা দখলের অভিযোগ

কাউন্সিলর হারুনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ বিভিন্ন জায়গা দখল করা এবং প্রভাব খাটিয়ে কম দামে কিনে নেওয়া। এছাড় দরিদ্র্য লোকেদের কাছ থেকে জায়গার ‘পাওয়ার অফ এটর্নি’ নিয়ে নিয়ে সিডিএ এর বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি লোপাটের সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

তিনি বাকলিয়া জুড়ে জায়গা দখলের জন্য স্বীকৃত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক মানিক এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা তসকির আহমেদকে ব্যবহার করতেন। এছাড়া কিশোর গ্যাং নেতা নাঈমকেও নানা অপকর্মে জড়িয়ে ফেলেছিলেন এই চতুর রাজনীতিবিদ।

হারুন অর রশিদের এসব অপকর্মে বিভিন্ন সময়ে তাকে সহায়তা করেন বাকলিয়া থানা আসা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। সাবকে ওসিন মহসীন ও ওসি নেজাম সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে পড়েছিলেন এসব অপকর্মে।

পট পরিবর্তনে পর কাউন্সিলর হারুন নিজেকে সাবেক শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ হোসেনের আত্নীয় বলে পরিচয় দিয়ে খোলস পালটানোর চেষ্টা করছে। যদিও নগর জামায়াত ও ছাত্রশিবির সূত্রে জানা গেছে, সাজ্জাদ একজন সন্ত্রাসী তাকে আশ্রয় দেয়া হ্যবে না। এছাড়া কাউন্সিলর হারুনের মতো অপরাধীদের যারা প্রশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কাউন্সিলর হারুনের এক ভাই বিএনপির রাজনীতি করেন। যদিও বিগত ১৫ বছরে তাকে কোন মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিতে দেখা যায়নি। তিনি বর্তমানে বিএনপি নেতাদের কাছে গিয়ে নিজের ভাইকে বাঁচানোর জন্য তদবির করছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, এমন কাজের প্রমাণ পাওয়া গেলে যেকোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক জানান, চট্টগ্রামে যেসব থানার ওসি এবং যেসব কাউন্সিলর খুন ও সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরী ও জমি দখলের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোতে আসা ও সম্ভাব্য সব প্রতিবেদন আমলে নেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সমন্বয়ক।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours