ডেস্ক নিউজ:
দেশের সাত বিভাগে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু
ঢাকায় টিকাদান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের সমাপ্তির পর দেশের অবশিষ্ট সাতটি বিভাগে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট ও রংপুর বিভাগে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইনের চূড়ান্ত পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হয়। এ বছর ১০-১৪ বছর বয়সী ৬২ লাখেরও বেশি মেয়ের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এই টিকা দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
টিকাদান ক্যাম্পেইনের চূড়ান্ত পর্যায়ের এই কার্যক্রম সারা দেশে এক মাসব্যাপী চলবে। ক্যাম্পেইনের প্রথম পর্যায়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর ঢাকায় ১৫ লাখেরও বেশি মেয়েকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। দ্য ভ্যাকসিন এলায়েন্স (গ্যাভি), ইউনিসেফ ও ডাব্লিউএইচও’র সহায়তায় এ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, ‘ক্যানসারজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যানসার বাংলাদেশের মেয়েদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিভাগের ১৫ লাখেরও বেশি মেয়েকে টিকার মাত্র একটি ডোজ দেওয়ার মাধ্যমে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনের প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করেছে সরকার। পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে এমন ১০-১৪ বছর বয়সী মেযেদের টিকা দেওয়ার জন্য ঢাকা বাদে অবশিষ্ট সাতটি বিভাগে আজ থেকে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া হবে।’
২০২৪ সালে গ্যাভির সহায়তায় ৬২ লাখ টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে বিনামূল্যে এই টিকা পাওয়া যাবে, তবে আগে থেকেই ভ্যাস্কইপিআই অ্যাপে বা এই ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। সরকারি ছুটির দিন বাদে সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নিয়মিত এই টিকাদান কর্মসূচি চলবে।
গ্যাভি, দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের চিফ কান্ট্রি ডেলিভারি অফিসার থাবানি মাফোসা বলেন, ‘টিকা দেওয়ার আজকের এই কার্যক্রমের অর্থ হলো আগামী বছরগুলোতে আরও লক্ষাধিক মেয়েকে জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত করা হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশের নারী ও মেয়েদের সুস্থ জীবনযাপনের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য জীবন রক্ষাকারী এই টিকা গ্রহণের সুযোগ আরও সম্প্রসারণ করতে বাংলাদেশ সরকারের অংশীজন হয়ে একযোগে কাজ করবে গ্যাভি।’
২০২৩ সালে বাংলাদেশে ১৫ লাখসহ বিশ্বের ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি কিশোরীকে গ্যাভির সহায়তায় এইচপিভির এই প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। টিকাদান ক্যাম্পেইনের গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বিতীয় পর্যায়টি গত বছরের অবিশ্বাস্য অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ, গ্যাভির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৮ কোটি ৬০ লাখ কিশোরীকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনার ক্ষেত্রে চলমান টিকাদান কর্মসূচিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ (ওআইসি) এমা ব্রিগহাম বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে, অনানুষ্ঠানিক ও ধর্মীয় বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অথবা রাস্তায় বসবাসকারী কোনও মেয়েই যেন এই টিকাদান কর্মসূচি থেকে বাদ না পড়ে সে বিষয়টি মাথায় রেখে এখন বাংলাদেশের অবশিষ্ট সাতটি বিভাগের মেয়েদের এই জীবন রক্ষাকারী টিকা দেওয়ার সময় এসেছে।’
ইউনিসেফ জানায়, জরায়ুমুখ ক্যানসারে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজার নারীর মৃত্যু হয়, তবে কেবল টিকাদানের মাধ্যমে এই ক্যানসার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। জরায়ুমুখ ক্যানাসর প্রতিরোধে এই টিকা হচ্ছে সবচেয়ে সাশ্রয়ী একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা। এই টিকা নেওয়া মেয়েদের প্রায় ৯০ শতাংশের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি কমে গেছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) রিপ্রেজেন্টেটিভ ডা. বর্ধন জং রানা বলেন, ‘এই টিকা জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে সক্ষম।’
ইউনিসেফ জানায়, ক্যাম্পেইনের প্রথম পর্যায়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে, টিকাগ্রহণে উপযুক্ত সব কিশোরী যাতে টিকা নিতে পারে তা নিশ্চিত করাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত নেই এমন মেয়েদের টিকার জন্য নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বাধা উত্তরণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এই দ্বিতীয় পর্যায়ে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কওমি মাদ্রাসা) ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে আরও নারী শিক্ষকদের সম্পৃক্ত এবং কমিউনিটি পর্যায়ে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী মাসে ক্যাম্পেইনটি শেষ হওয়ার পর থেকে এইচপিভি টিকা পঞ্চম শ্রেণির মেয়েদের এবং শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে এমন ১০ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
+ There are no comments
Add yours