মোহাম্মদ ইব্রাহিম আখতারী
প্রাবন্ধিক ও রাজনীতিবিদ
চাল,ডাল,তেল, ছোলা,চিনিসহ ইত্যাকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম আকাশচুম্বী। ক্রমাগত লাফাচ্ছে পণ্যমূল্য,যেন এক পাগলা ঘোড়া। স্বাভাবিক আচরণ হারিয়ে ক্রমশঃ অস্থির হয়ে উঠছে বাজার। যা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বহির্ভূত হয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে নাগরিক জীবন ওষ্ঠাগত। প্রতি বছরই পবিত্র মাহে রমজান এর পূর্বে এরূপ দৃশ্যমান হয়। অধিক মুনাফালোভী একটি ব্যবসায়িক দুষ্টচক্র নাকি এহেন গর্হিত কাজের সাথে জড়িত। যারা পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট সৃষ্টির মাধ্যমে এ কৃত্রিম সংকট তৈরী করে। এসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মনে হয় গোটা বছর কোন ব্যবসা করতে পারে না। যেজন্য এদেরকে পবিত্র রমজানকেই টার্গেট করতে হয়। অপ্রত্যাশিতভাবে এরা নিত্যপণ্য অবৈধভাবে গুদামজাত করে। যৎকারণে ভিন্ন চেহারায় দৃশ্যমান হয় নিত্যপণ্যের বাজার। ফলশ্রুতিতে সাধারণের রোজা পালন খুবই কষ্টসাধ্য হওয়া ছাড়াও নানবিধ দুর্ভোগ ভোগান্তির কোন অন্ত থাকে না। এসব ব্যবসায়ীদের সাথে সরকার দলীয় বড় বড় রাঘব বোয়ালদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। অনস্বীকার্য বাস্তবতা হলো, এটি হচ্ছে একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। যেথায় 92 শতাংশ মুসলমান এর আবাস। উপরন্তু এটি বিশ্বের 2য় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। সুতরাং এরকম একটি দেশের মানুষের নিকট তাদের ধর্মীয় উৎসব, পালা-পার্বণ ইত্যাকার বিষয়াদি অত্যন্ত ভাব-গাম্ভীর্যতাসমেত নিরুপদ্রবভাবে উদযাপন করার প্রত্যাশা থাকাটা নিতান্ত স্বাভাবিক। কিন্তু অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, এক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় ঠিক তার উল্টোটা। কোনভাবেই নির্বিঘ্ন হয়না এসব। যা শুধু দূঃখজনক নয় বরং গ্লানিকরও বটে। অথচ এমনটি হওয়ারতো কথা নয়। কেননা এটি একটি স্বাধীন দেশ। যেখানে একটি শক্তিশালী সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। তথাপিও এসব অবাঞ্ছিত বিষয়য়াদি নিয়ন্ত্রনের কেউ নেই। মনে হচ্ছে এটি কোন দেশ নয়, যেন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। যাইহোক, অতি সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানালেন- দেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তকমা ঘুচিয়ে উন্নয়নশীল দেশে পা রেখেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় এটি এক মহা অর্জন। এছাড়া ইতোপূর্বে আরও অনেক জাতীয় অর্জন আমাদের প্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়েছে। সচেতন মহল মাত্রই এক্ষেত্রে অভিন্ন মত পোষন করবে নিশ্চিতভাবে। এজন্য বর্তমান সরকার সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে প্রশ্ন হলো এদেশের কত শতাংশ মানুষ এসব বিষয়ের সাথে পরিচিত? কয়জনই বা বুঝে নিম্ন আয়ের দেশ, স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল কিংবা উন্নত দেশ সম্পর্কে। কতজনই বুঝে দেশের প্রবৃদ্ধি তথা রিজার্ভ ইত্যাকার বিষয়াদি। এক্ষেত্রে অধিকাংশরাই চাই দিনে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত এর নিশ্চয়তা। নিরুপদ্রব ও নিস্কন্টকভাবে জীবনযাপন। ইজ্জত – আব্রুর গ্যারান্টি। একজন নাগরিক হিসেবে চাই কেবল তাদের ন্যায্য অধিকারটুকুন। যা রাষ্ট্রের নিয়ন্তারা কখনও এড়িয়ে যেতে পারেন না। স্মরণ রাখতে হবে যে,দেশের সিংহভাগ জনগণের পাল্স বুঝার ক্ষেত্রে যদি কোনরূপ ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে এর পরিণতিও কিন্তু মোটেও শুভ নয়। তাই এ মূহুর্তে বাজারের লাগাম টেনে ধরা জরুরী নয় কি? আর তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে এখন থেকেই বাজারকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। জোরদার করতে হবে বাজার মনিটরিং। অবিলম্বে মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে হবে। অতঃপর এসব দেশদ্রোহীদের গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় কোনপ্রকার অর্জনই জাতীয় জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয়না। অতএব,দেশের গরিব-অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির চাহিদার প্রতি কোনপ্রকার ভ্রুক্ষেপ না করে উন্নয়নশীল দেশের তৃপ্তির ঢেকুর তোলা বিলাসী চিন্তা বৈ আর কিছুই নয়।
+ There are no comments
Add yours