
ডেস্ক নিউজ:
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গত কয়েকদিন ধরে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা জোরদারে আজ রোববার থেকে বসছে দুটি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প। এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবরে ১০ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছাবে বাহিনীর সদস্যরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ২৩ ইস্ট বেঙ্গলের উপ-অধিনায়ক মেজর নাজিম আহমেদ।
ইতোমধ্যে ঢাকা উদ্যানে একটি অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড এই ক্যাম্প বসিয়েছে। মেজর ফজলে বারী জানান, এই ক্যাম্পটি ঢাকা উদ্যান এবং চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকার নিরাপত্তায় কাজ করবে। আরও একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।
এর আগে, শনিবার বিকেলে মোহাম্মদপুরে বিহারি ক্যাম্পে গোলাগুলির ঘটনায় শিশুসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় এ হামলা চালানো হয়। নিরাপত্তার দাবিতে মোহাম্মদপুর থানা ঘেরাও করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন স্থানীয়রা।
এরপর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেনাবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ৪৫ জনকে আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে ৪০ জন সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী, বাকি পাঁচ জন ডাকাতির সঙ্গ জড়িত।
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, বুনিয়া সোহেল দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এতে যারা বাধা দিচ্ছে তাদের ওপরই হামলা চালাচ্ছে সোহেল ও তাঁর দল। ৫ আগস্টের পর কয়েকটি হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
২৩ ইস্ট বেঙ্গলের উপ-অধিনায়ক মেজর নাজিম আহমেদ বলেন, মোহাম্মদপুরের দুই-তিনটি হাউজিং এলাকার মধ্যে একটি করে এমন অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হবে; যেখান থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরো এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।
এসময় মোহাম্মদপুরবাসীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা আতঙ্কিত না হয়ে তথ্য দিন। তথ্য দিলে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে।
মেজর নাজিম জানান, ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান ও বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটিতে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেনাবহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসময় ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৬১ রাউন্ড গুলি, ১৯ রকমের মাদক, একটি গ্রেনেড, ৮০টি দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।’
মোহাম্মদপুরে ২৭/২৮ কিশোর গ্যাং চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান: জেনেভা ক্যাম্পে এ পর্যন্ত ছয়বার অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রচুর দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত যত গ্রেপ্তার হয়েছে তার ৩০ শতাংশ জেনেভা ক্যাম্পের।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্য ১৫-১৬ জন গডফাদার এবং লিডার রয়েছে। তারা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদকসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এলাকাবাসীকে শান্তিতে রাখতে সেনাবাহিনীর এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ঢাকা উদ্যান, একতা, নবোদয়, নবীনগর ও শ্যামলী হাউজিং এবং তুরাগ নদসংলগ্ন ওয়াকওয়েতে প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে। দিনের আলো নিভলেই জেঁকে বসছে আতঙ্ক। স্থানীয়রা জানান, একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক চাপাতি হাতে দৌঁড়ায় আর কোপায়। সামনে যাকে পায়, কুপিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। রেহাই পান না দোকানিরাও।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে আধা ঘণ্টায় মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের ডি ব্লক ও একতা হাউজিংয়ে অন্তত ৩০ জন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। লুট হয় বিভিন্ন দোকানেও। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পাঁচজন গুরুতর জখমসহ ২৫ জন আহত হন।
দোকানিরা জানান, যে সড়কে মানুষের চলাচল কম, আতঙ্কে সন্ধ্যার আগেই তারা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করছেন। একতা হাউজিংয়ের অটোরিকশা মেরামত মিস্ত্রি মো. ফয়েজ জানান, সন্ধ্যা নামলেই দুর্বৃত্তরা চাপাতি হাতে ঘোরাঘুরি করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছিনতাই চক্রে ২৫-৩০ জন রয়েছে। রাতে সবাই একসঙ্গে চাপাতি, রড ও পাইপ হাতে বের হয়। সামনে যাকে পায়, কুপিয়ে সব নিয়ে নেয়। তাদের কৌশল একটু ভিন্ন। হেঁটে নয়, তারা চাপাতি হাতে দৌঁড়াতে থাকে। আতঙ্ক তৈরিতে সমানে কোপাতে থাকে। মানুষ, দোকান কিছুই বাদ দেয় না। তাদের দাপটে অনেকেই সন্ধ্যায় বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
সড়কে মানুষকে কোপানো ও ছিনতাইয়ের মতো লোমহর্ষক একাধিক ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ২৫-৩০ দুর্বৃত্ত তুরাগ নদের ওয়াকওয়ের দিক থেকে একতা হাউজিংয়ে ঢুকে লুটপাট শেষে ফিরে যায়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবারও তারা একই পথে এসে একতা হাউজিং, ঢাকা উদ্যানের ডি ব্লকের বিভিন্ন সড়কে ছিনতাই করে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের জনবল বাড়াতে দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান জানান, দুর্বৃত্তদের ধরতে তারা কাজ করছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কয়েকজন শনাক্ত হয়েছেন। স্থানীয়দের নিয়ে ছিনতাই প্রতিরোধ করা হবে।
 
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                            
 
                         
                 
                                     
                                     
                                     
                             
                             
                             
                                                         
                                
                         
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                
+ There are no comments
Add yours