বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পুরোটাই দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি

Estimated read time 1 min read
Ad1

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর বড় একটি সদরদপ্তর দখলের দাবি করেছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। এটি হলে রাখাইনে জান্তা সরকারের দ্বিতীয় আঞ্চলিক কমান্ডের পতন ঘটলো। সবশেষ যেসব খবর এসেছে তাতে আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে- এমন খবর আসার পর বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগের উদ্যোগের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মি জানিয়েছে, দুই সপ্তাহের তুমুল লড়াইয়ের পর রাখাইনে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের পতন হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।

তবে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা করেও তারা মিয়ানমারের সামরিক সরকারের কারও সাথে কথা বলতে পারেনি। মিয়ানমারে ২০২১ সালে বেসামরিক সরকার উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি হয়। এরপর থেকেই ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহে রূপ নিয়েছে।

জান্তা বিরোধী থ্রি বাদারহুড অ্যালায়েন্সের একটি হলো আরাকান আর্মি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে এ জোট ব্যাপক হামলা শুরু করে। চীন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে এ সশস্ত্র বাহিনীটি। অগাস্টে এই জোট উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিও নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর মাধ্যমে মিয়ানমারের ইতিহাসে এটিই প্রথম কোনো আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের পতনের ঘটনা ঘটে।

বঙ্গোপসাগরের সাথে মিয়ানমারের একটি উপকূলীয় প্রদেশ হলো রাখাইন। এটি দেশটির দরিদ্রতম অঞ্চলগুলোর একটি। যদিও এর অফশোর গ্যাসের রিজার্ভ আর পরিকল্পিত অর্থনৈতিক জোন আছে কিয়াকপু এলাকায়, যেখান থেকে পাইপলাইনে করে তেল ও গ্যাস নেয়া হয় চীনে।

রাখাইন মূলত রোহিঙ্গা মুসলিমদের আবাসস্থল। জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গত নভেম্বরে সেখানে লড়াই শুরু হয়েছিলো। এরপর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি একের পর এক জয় পেয়েছে।

তবে কিছু রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী অভিযোগ করেছে যে উত্তর রাখাইনে অভিযানের সময় আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদেরকেও টার্গেট করেছিলো। এর জের ধরে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে হয়েছে।

আরাকান আর্মি কারা

কাচিন ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মির (কেআইএ) সহায়তায় ইউনাইটেড লীগ অব আরাকানের সামরিক শাখা হিসাবে আরাকান আর্মি গঠিত হয় ২০০৯ সালে। তাদের লক্ষ্য, একটি সার্বভৌম আরাকান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।

আরাকান আর্মি কখন সামরিক তৎপরতা শুরু করে সেটি নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে ধারণা করা হয় ২০১৫ সাল থেকে পালেতোয়া টাউনশিপ এলাকায় তাদের সামরিক তৎপরতা দেখা যায়। সেনাবাহিনীর সাথে তারা গত কয়েক বছর ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে এবং এই সময়ে রাখাইন রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী চিন রাজ্যে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করতে সমর্থ হয়েছে।

এমনকি সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই রাখাইনে তাদের ভিত মজবুত ছিল। রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে তাদের তৎপরতা ছিল। আরাকান আর্মির তৎপরতা যেখানে রয়েছে সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করে। দুই বছর আগে তারা দাবি করে, রাজ্যটির ৬০ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে এসে আরাকান আর্মির একের পর এক আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সরকারি বাহিনী।

মিয়ানমারের পত্রিকা ইরাবতীর চলতি বছরের সাতই ফেব্রুয়ারির এক খবরে বলা হয়, মাস খানেক ধরে হামলা চালানোর পর ৬ ফেব্রুয়ারি জাতিগত রাখাইন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাজ্যটির মিনবিয়া শহরাঞ্চলে থাকা দুটি জান্তা সামরিক ইউনিটের সদরদপ্তরগুলো দখল করে নিয়েছে।

একই দিনে বাংলাদেশের সাথে সীমান্তে মংডু শহরাঞ্চলের টং পিও টহল চৌকি দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর থেকে নিয়মিতই আরাকান আর্মির জয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি–সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

 

খবর বাংলা ২৪

নির্বাহী সম্পাদক, খবর বাংলা ২৪ ডট নেট

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours