লেখকঃতুর্জি দত্ত
চট্টগ্রাম।
বন্ধুরা মিলে ঠিক করি নাপিত্তাছড়া ঝর্না দেখব৷ তাই ২২ জুলাই ( সোমবার) মাদারবাড়ি বাস স্টেশন থেকে বাসে ( চয়েস) করে সকাল ৭.৪০ মিনিটে রওনা হই নাপিত্তাছড়ার উদ্দেশ্যে। ভাড়া ছিলো ৮০ টাকা। তারপর বাস সীতাকুণ্ড ক্রস করে মিরাসরাই গেলে নরদূয়ারী মসজিদের সামনে নেমে যাই আমরা। সেখানে নেমে সামনেই নাপিত্তাছড়া যাওয়ার রাস্তা, যে কাউকে বললে দেখিয়ে দিবে। নাপিত্তাছড়ার রাস্তা দিয়ে ঢুকার সময় প্রথমে কিছু দোকান রয়েছে ওখান থেকে বাঁশ কিনে নিই যার দাম ১০ টাকা। তারপর ওই রাস্তা দিয়ে সোজা হাঁটতে থাকি। সামনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা রেল লাইন চোখে পড়বে। ওখানে কিছু চায়ের দোকান আছে এবং ওখানে অনেক গাইড অপেক্ষা করে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে। গাইড পুরো ট্রেইলটা আপনাদের নিয়ে যাবে যাতে আপনি কোনো পথ চিনতে ভুল না করেন। আমরাও একজন গাইড ঠিক করেছিলাম ২০০ টাকা দিয়ে। তারপর গাইড নিয়ে হাঁটা শুরু করে আমাদের টিমগ্রামের রাস্তা দিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটতে হয় আমাদের । তারপর পড়বে ঝিঁরিপথ।
এই ঝিঁরিপথ দিয়েই নাপিত্তাছড়া ঝর্না যেতে হয়। প্রায় ১ ঘন্টা ঝিঁরিপথ দিয়ে হেঁটে আমরা প্রথম ঝর্না ঝরঝরিতে পৌঁছাই। সেখানে প্রায় ৩০ মিনিট সেখানে ছিলাম আমরা তারপর গাইডের সাহায্যে দ্বিতীয় ঝর্না কুপিকাটাকুমে পৌঁছাই বলে রাখা ভালো এই ঝর্নাটা আমাদের কাছে একটু বিপদজনক মনে হয়েছে। তাই একটু সাবধনতা অবলম্বন করায় উত্তম মনে করে আমরা এই ঝর্নায় নামিনি।
এরপর আমারা রওনা হলাম তৃতীয় ঝর্নার দেখার উদ্দেশ্যে। এই ঝর্নায় যাওয়ার জন্য কিন্তু পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়। তারপর পাহাড়ি পথ দিয়ে অনেকক্ষন হেটে আবারও ঝিড়িপথ দিয়ে হাঁটতে হয় ভালোই লাগছিল প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে প্রিয় পাঠক আশাকরি আপনাদেরও মন্দ লাগবে না! প্রকৃতি এখানে তার পূর্ণরুপ দেখাতে একটুও কৃপনতা করেনি! যাইহোক, প্রায় ৪০-৫০ মিনিট হেঁটে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম বান্দরকুম ঝর্ণায় ৷
”
এ ঝর্নাটা অসম্ভব সুন্দর যা লিখে প্রকাশ করতে পারবো না। আপনি নিজে না দেখলে বুঝবেন না৷ এখানে তাই একটু বেশি সময়ই ছিলাম আমরা আপনারা আপনাদের সময় খেয়াল করে থাকবে ঝর্ণাটি একটু বেশি রুপবতী হওয়ায় আপনাকে সময় সম্পর্কে ভুলিয়েও দিতে পারে! যেহেতু আমাদের উদ্দেশ্য নাপিত্তাছড়া তো এবার আমাদের এখান থেকে যেতে হবে তাই রওনাও হলাম চতুর্থ ঝর্না নাপিত্তাছড়ার দিকে ৷
এবারে আমাদের হাঁটতে হলো প্রায় ৩০ মিনিট। অবশেষে আমরা নাপিত্তায় ছড়ায় ঝর্নাটির রুপ আর কি বর্ণনা করে যারা যাবেন বা যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করে তাদের জন্য তোলা থাক নাপিত্তাছড়া বর্ষায় তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পায় । উফ্ ঝর্ণার রুপ দেখতে দেখতে প্রচন্ড খিদে পেয়ে গেলো তাই এখানেই লাঞ্চ সেরে নিলাম খাবার আমরা নিয়েই গিয়েছিলাম অবশ্য আপনারা চাইলে ঝর্না দেখার পর ফিরতি পথে রেল গেইটে যেসব হোটেল রয়েছে তাতে খেতে পারেন। এবার ফেরার পালা । ঘন্টা খানেক হাঁটার পর আমরা নরদূয়ারী মসজিদে পৌছায়। সেখানে একটু রেস্ট নিয়ে হালকা নাস্তা করতে করতে বাসের জন্য অপেক্ষা করি৷ চয়েস বাস গুলো এই রোড দিয়েই চট্টগ্রাম যাতায়াত করে তাই আমরা তাই বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না আমাদের । এখান থেকে মাদারবাড়ি বাস স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া নিবে আশি টাক ৷ বাস থেকে নেমে আমরা যেযার যার বাসার পথ ধরলাম কিন্তু মন পরে রইলো নাপিত্তাছড়ায়। জনপ্রতি ২৫০ টাকা খরচ হয়েছিলো আমাদের । আর যদি লাঞ্চ করতাম তাহলে ৩৫০-৪০০ টাকার মত খরচ হতো। প্রিয় পাঠক পুরো ভ্রমনের বিস্তারিততে আমি খরচের বিষয়টি তুলে ধরেছি যাতে যারা আমাদের মত ছোট -খাটো টিম করে ঘুরতে যাবেন তাদের সুবিধা হয়। পরিশেষে বলতে চাই এই প্রকৃতি আমাদের, আমাদেরই কল্যাণে তাই একে টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও কিন্তু আমাদেরই! চেষ্টা করবে ঘুরতে গেলে জায়গাটি যাতে আমাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
+ There are no comments
Add yours