তুরষ্কে খেলাফতের পতনের পর কামাল আতাতুর্ক ক্ষমতায় আসীন হয়ে আযান কে তুর্কি ভাষায় প্রচলন করে। ইসলামকে নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে জাতীয়তাবাদকে একমাত্র সমাধান হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। অবস্থা এমন শোচনীয় হয়ে যায় যে, আল্লাহর নাম ডাকাও নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ত্বরিকতপন্থীরা গোপনে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে ব্যক্তিজীবনে ইসলামী আদর্শ ধরে রাখতে কাজ করতে থাকে।
কামাল আতার্তুকের পর ডানপন্থী নেতা আদনান মেন্দেরেস ক্ষমতায় আরোহণ করে। বাম থেকে ডান হওয়ায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। জনপ্রিয়তা কে স্থায়ী করতে তিনি পুনরায় আরবিতে আজান চালু করেন। তরিকতপন্থীদের কাজের স্বাধীনতা দেন, তাদের কে অর্থায়ন করেন।
কিন্তু এসবের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিলো সেক্যুলার ইসলাম কে প্রমোট করা। ঘরে, মসজিদে বা খানকায় বসে ইবাদত করতে পারলেই তো হলো, এর চেয়ে বেশি আর কি চাই?
বাংলাদেশের সেক্যুলার শক্তি অনেকটা নয় বরং পুরোপুরি তুরষ্ক মডেল অনুসরণ করে বলে আমার মনে হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের সেক্যুলার সকল শক্তি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বানিয়ে অথবা ইসলামী দলগুলো কে সাময়িক কিছু সুযোগ সুবিধা বা গণভবনে চায়ের দাওয়াত দিয়ে খুশি রেখে ইসলামের প্র্যাক্টিস মসজিদ ও খানকায় আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আর ইসলামী দলগুলো বিভিন্ন কারণে অকারণে নিজেদের মধ্যে দন্ধ বাড়িয়ে সেক্যুলার শক্তিকে আরো বেশি শক্তিশালী করেছে।
সেক্যুলার শক্তি কামাল আতার্তুক বা আদনান মেন্দেরেসের তুরষ্ককে মড়েল হিসেবে নিলেও ইসলামী শক্তি উস্তাদ মেহমেদ জাহিদ কে অনুসরণ করতে পারেনি। ১৯৬৮ সালে উস্তাদ মেহমেদে জাহিদের নেতৃত্বে ৪০জন তরিকতপন্থী আলেম ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলো, তুরষ্কের প্রয়োজন তারা ইসলামী আন্দোলনের পতাকাবাহী দল তৈরী করে সর্বাগ্রে আখলাক ও আধ্যাত্মিকতার আলোকে রাষ্ট্র গঠন করবে। এবং তারা এজন্য একজন যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজতে থাকে যিনি একাধারে ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান রাখার পাশাপাশি বর্তমান যুগের চাহিদা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন। পরিশেষে উনারা এসব যোগ্যতার মিলনস্থল হিসেবে আবিষ্কার করেন তুরষ্কের বিখ্যাত তরুণ সাইন্টিস্ট প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান কে। যিনি একাধারে কুরআন, হাদিস, উসূল, ফিকহ এবং অর্থনীতি, বিজ্ঞান, গণিত সম্পর্কে জ্ঞানী ছিলেন।
এখন প্রশ্ন হলো তুরষ্কের সূফীবাদী আলেমরা অসম্ভব কে সম্ভব করে দেখাতে পারলেও, আর বাংলার সূফীবাদীরা পারেনা কেন? তারা কেন গণভবনে বা যমুমাতে চায়ের দাওয়াত পাওয়া কে বিরাট সফলতা মনে করে? তারা কেন শুধু মিলাদ, মাহফিল,ওরশ, ফাতেহা এসব করতে পেরেই সন্তুষ্ট থাকে? কেন তুরষ্কের সুফিবাদী আলেমদের মত ইসলামী আন্দোলনের চেতনা উনাদের মধ্যে কাজ করেনা?
বিশ্বাস করুন! আমি এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু যারা উত্তর দিবেন তাদের কাছে এর কোন উত্তর নেই।
আল্লাহ পাক আমাদের বুঝার মত চেতনা দান করুক। আমিন।
লেখক:
মুহাম্মদ রেজাউল মোস্তফা তানভীর আজহারী।
সাবেক লেকচারার, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
+ There are no comments
Add yours