আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের ২৩৫ বছরের নির্বাচনি রাজনৈতিক ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় স্মরণীয়। ১৩২ বছরের রেকর্ড ভেঙে দ্বিতীয় বারের মতো জয় পেয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় ২০ জানুয়ারি (আজ সোমবার) থেকে হোয়াইট হাউজে তার দ্বিতীয় যুগ শুরু হচ্ছে। ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার শপথ উপলক্ষে ওয়াশিংটনে সাজ সাজ রব। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে পুরো শহর।
তীব্র ঠাণ্ডার কারণে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে ক্যাপিটাল হিলের ভেতরে। প্রথা ভেঙে ট্রাম্প তার শপথ অনুষ্ঠানকে বিশ্বমঞ্চে রূপ দিচ্ছেন। এর আগে বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের শপথে আমন্ত্রণ না জানানো হলেও ট্রাম্প সেই কাজটি করেছেন। ২ লাখ ২০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। থাকবে নৈশভোজ যার টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে ট্রাম্প জয়লাভ করেন। ট্রাম্পের এই ভূমিধস জয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক স্মরণীয় ইতিহাস হয়ে থাকবে। এর আগে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথম বারের মতো আমেরিকার মসনদে বসেছিলেন ট্রাম্প।
শপথ হবে পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে
চার বছর পরপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক হয় খোলা স্থানে। কিন্তু এবার ভিন্ন আবহে ট্রাম্পের অভিষেক হবে। তীব্র ঠাণ্ডায় কংগ্রেস ভবনের ভেতরে অভিষেক হবে। দ্বিতীয় বারের মতো কংগ্রেস ভবনের রোটুন্ডায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পুরো আয়োজন। ভয়াবহ ঠাণ্ডার কারণে এমনটি করা হচ্ছে বলে শুক্রবার ট্রাম্প নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। মার্কিন আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে নেমে যাবে। কংগ্রেস ভবনের ভেতরে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবার বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হবে না বলে জানিয়েছে বিভিন্ন মার্কিন গণমাধ্যম। সেখানে মাত্র ২০ হাজার অতিথির বসার স্থান রয়েছে। বাইরে থাকবে ২ লাখের বেশি অতিথি। যারা টিকিট পাননি, তারা ন্যাশনাল মলে বড় স্ক্রিনে অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করতে পারবেন। শপথের পর ট্রাম্প ক্যাপিটাল থেকে হোয়াইট হাউজে একটি জমকালো প্যারেডের মাধ্যমে যাত্রা করবেন। ট্রাম্পের সম্মানে আয়োজিত কুচকাওয়াজও হবে ক্যাপিটাল রোটুন্ডায়। এবারই প্রথম নয়, এর আগে ১৯৮৫ সালে ক্যাপিটাল ভবনের ভেতরে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন রোনাল্ড রিগ্যান। তখনো তীব্র ঠাণ্ডায় শপথ অনুষ্ঠান ক্যাপিটলের রোটুন্ডায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তখন হঠাতই হিমাঙ্কের পারদ নেমে পড়ে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
শপথ অনুষ্ঠান
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শুরু হয় ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় (যদি তা রবিবার পড়ে, তবে পরের দিন)। সাধারণত, শপথগ্রহণ পরিচালনা করবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। তিনি দ্বিতীয় বারের মতো ট্রাম্পের জন্য শপথগ্রহণ পরিচালনা করবেন। শপথশেষে ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন। ক্যাপিটলে ট্রাম্পের এ উদ্বোধনী ভাষণের দিকে তাকিয়ে থাকবে আমেরিকা ও বিশ্ব, যেখানে তিনি তার নতুন মেয়াদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন। ২০১৭ সালে তার প্রথম ভাষণ ‘আমেরিকান কারনেজ’ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। এবারও তিনি সাহসী ও শক্তিশালী বার্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই দিন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও একই মঞ্চে শপথ নেবেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি
ট্রাম্পের এই শপথ অনুষ্ঠানে প্রযুক্তি জগতের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যক্তিদের উপস্থিতি হবে একটি বড় চমক। ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ এবং টিকটকের প্রধান নির্বাহী শৌ চিউসহ আরও অনেকে এই অনুষ্ঠানে ভিআইপি আসনে থাকবেন। বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামা উপস্থিত থাকবেন। অন্য সাবেক প্রেসিডেন্টদের স্ত্রীরা উপস্থিত থাকলেও মিশেল ওবামা আসবেন না। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও উপস্থিত থাকবেন।
এ যেন এক বিশ্বমঞ্চ
প্রথাগতভাবে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো না হলেও ট্রাম্প ইতালি ও হাঙ্গেরির ডানপন্থী নেত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ভিক্টর অরবান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলেই এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা দলের (ট্রানজিশন টিম) পক্ষ থেকে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে ও ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়াকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বুকেলে থাকবেন কি না, এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ওয়াশিংটনে সংক্ষিপ্ত সফরকালে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নোবোয়া। অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নির্বাহী আদেশ ও কর্মসূচি
ট্রাম্প তার দায়িত্বের প্রথম দিনেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক অভিবাসী বহিষ্কার কর্মসূচি চালু করা, তেল উত্তোলন বৃদ্ধি করা এবং ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটাল হামলায় অভিযুক্ত কিছু সমর্থককে ক্ষমা করা। ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, তিনি অনেকগুলো নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সংগীত
২০১৭ সালের শপথ অনুষ্ঠানে তারকাদের উপস্থিতি কম ছিল। কিন্তু এবার ট্রাম্পের মঞ্চ আলোকিত করবেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীরা। কান্ট্রি গায়ক ক্যারি আন্ডারউড ‘আমেরিকা দ্য বিউটিফুল’ পরিবেশন করবেন। লি গ্রিনউড তার বিখ্যাত গান ‘গড ব্লেস দ্য ইউএসএ’ গাইবেন। স্থানীয় সময় রবিবারের (গতকাল) প্রাক-উদ্বোধনী রেলিতে ভিলেজ পিপল, কিড রক এবং বিলি রে সাইরারের পারফর্ম করার কথা। এছাড়া জেসন অ্যালডিন, রাসকাল ফ্ল্যাটস এবং গ্যাভিন ডিগ্রোসহ আরও অনেক তারকা তিনটি গালা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
নৈশভোজ
রোববার রাতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনায় ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন ভিক্টরি রেলি’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আজ সোমবার তার শপথগ্রহণের পরে একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে টিকিটের সর্বোচ্চ দাম ১০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা)। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট দুই জনের সঙ্গেই নৈশভোজ করা যাবে। ঐ নৈশভোজে থাকার জন্য পাঁচ ধরনের টিকিটের বন্দোবস্ত রয়েছে। সর্বোচ্চ ১২ কোটি টাকার বেশি দুটি টিকিট রয়েছে। এছাড়াও রাখা হয়েছে ৫ লাখ ডলার, আড়াই লাখ ডলার, এক লাখ ডলার এবং ৫০ হাজার ডলারের টিকিটও রয়েছে।
সূত্র: ইত্তেফাক
+ There are no comments
Add yours