আকাশ মার্মা মংসিং | বান্দরবান:
বান্দরবান পার্বত্য জেলা শহর জুড়ে, লামা,আলিকদম রোয়াংছড়ি, রুমা, চিম্বুকব ও থানচি উপজেলাতে লকডাউন পরিস্থিতিতে সরকারের উন্নয়ন ও সরকারী দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে সমতল অঞ্চল হতে শত শত শ্রমিক আমদানি করে পাহাড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা পাথর উত্তোলনে একের পর এক সিন্ডিকেট প্রতিযোগীতায় নেমেছে।
এক শ্রেনির পাথর খেকোরা অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথরগুলো সরকারের বিভিন্ন অবকাঠামোগত ব্রীজ, কালভার্ট, ভবন, সড়ক, অভ্যন্তরীন সড়কসহ উন্নয়নের নির্মান কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজস্ব হারাচ্ছে লক্ষ কোটি টাকা। অপরদিকে দুর্গম পাহাড়ে সাধারণ মানুষের চাহিদা মোতাবেক বিশুদ্ধ পানীর অভাবসহ জীববিচিত্র হারিয়ে বিলুপ্ত হতে বসেছে। পর্যটন অঞ্চল খ্যাত নাফাখুম, রেমাক্রী খুম, আমিয়াখুম, বেলাখুম, সাতভাইখুমসহ পর্যটন বিকাশে মুখ থুবরে পড়েছে। এসব পর্যটন স্পট গুলিতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী বা পর্যটক প্রকৃতি উপভোগ করা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটক স্পটগুলিতে দর্শনার্থী হ্রাস পেলে এই অঞ্চলে পর্যটনে স্থানীয়রা অর্থনৈতিতে প্রভাব পড়ার আশংঙ্কা রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত দিয়েছে স্থানীয়রা।
৩৭৩ নং পদ্ম মৌজা হেডম্যান হাবরুং ম্রো খবর বাংলাকে বলেন, দুর্গম পাহাড়ে বিশাল প্রকৃতি সম্পদে ভরপুর যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক বা পর্যটক প্রকৃতি প্রেমিকরা চলে আসে। কিন্তু পাহাড়ে সে জায়গা আর নেই। দুঃখ ভারাক্রান্তে তিনি বললেন, আমাদের খালে এক সময় প্রচুর পরিমান বোল্ডার পাথর ছিল, পাথর উত্তোলনের কারণে বিশুদ্ধ পানীয় জল ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে গড়া জীব বৈচিত্র শামুক, কাঁকড়া, ছোট মাছ, চিংড়িসহ নানাবিদ খাদ্য সমাগ্রী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, পাথরগুলো উত্তোলন ও ছোট বড় পাথরগুলো ভেঁঙ্গে ভেঁঙ্গে নিয়ে গেলে এ অঞ্চলে কাইতং পাড়া, বোর্ডিং পাড়া, কুংহ্লা পাড়া, হাবরুং হেডম্যান পাড়া, চংরই পাড়াসহ থানচি সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে আর কোন কিছুই থাকবে না। অত্র বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যাওয়ার উপক্রম সম্ভবনা হয়েছে।
বান্দরবানের থানচি উপজেলায় পর্যটনের জন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ও প্রতিদিন পর্যটন স্পটগুলোতে হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমন করেন। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠার বিভিন্ন রংবেরংঙ্গে সারি সারি পাথরের অবস্থানরত উপজেলা তিন্দু ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড এলাকার রেমাক্রী খালে উপর নাফাখুম, রেমাক্রী খুম, তাজিংডংসহ ছোট বড় পর্যটন স্পট, তিন্দু ইউনিয়নের ৭-৮-ও ৯নং ওয়ার্ডে ঙাক্ষ্যং খালে আমিয়াখুম, বেলাখুম, সাতভাইখুমসহ পর্যটন স্পটে পার্শ্ব এলাকায় পাথর উক্তোলন চলমান রয়েছে। এ সমস্ত জায়গাতে গত কয়েক বছর যাবৎকাল পর্যন্ত পাথর উক্তোলন করে আসছে। গত নভেম্বর ২০২০ থেকে অধ্যাবধি চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
প্রকাশ্যে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা এই প্রতিযোগীতার নামছে। দুর্গম পাহাড়ে ঝিড়ি ঝর্ণা থেকে প্রাকৃতিকভাবে গড়ার পাথরগুলো উত্তোলনে প্রশাসনের নজর পড়লেও এরিয়ে যাওয়ার কারনে বিপুল অংকে রাজস্ব হারাচ্ছে।
২০১৯ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পার্বত্য অঞ্চলে পাথর উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও সে আদেশ মানা হচ্ছে না। পাথর ও বালি উত্তোলনের ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলে আইন অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন ( ইউএনও), বন বিভাগ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীকে নিদিষ্ট জায়গা (যেখানে জনবসতিপূর্ণ নয় পানির উৎস প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সে জায়গা) থেকে পাথর উত্তোলন করে সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করার লক্ষ্যে আবেদন করা হলে আবেদনের প্রেক্ষিতে সুস্থ তদন্তের রিপোর্টে মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে অনুমতি মিললে সে জায়গা থেকে পাথর ও বালির উত্তোলন করা যাবে এমনটি আইন রয়েছে বলে প্রশাসনে সাথে কথা বলে জানা গেছে কিন্তু বান্দরবানে থানচি উপজেলায় সেটির কোন প্রকার আইন মানা হয়নি। একই অর্থবছরে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়ায় লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলিকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পরিবেশ অধিদপ্তরে কর্মকর্তা, পুলিশ সমন্বয়ে প্রচুর পরিমান পাথর জব্দ ও জড়িতদের নামে মামলা করা হয়েছে কিন্তু থানচি উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্টদের এমন কোনো কার্যক্রম নজরে আসেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাথর উত্তোলনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রধান বান্দরবান জেলা লামা উপজেলা ফাইসাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ইউপি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাজী নুরু আনোয়ার, যুগ্ন প্রধান থানচি বাজার পরিচালনা কমিটি সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপি সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি মেম্বার আবদুল কুদ্দুজ, সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতা উচনু মারমা, বান্দরবান জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোহম্মদ হোসেন সওদাগর, লোহাগাড়া থানা জামাত নেতা মোঃ এরফান হোসেন, সাতকানিয়া থানা সাবেক জামাত নেতা মোঃ ইমরান হোসেন, রুমা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী চিংসাথোয়াই মারমা (বিপ্লব), বলিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক জামাত নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা ইসলাম সওদাগরসহ এই ৭-৮জনে গিলে গিলে খাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
যোগাযোগ করা হলে সিন্ডিকেট প্রধান লামা ফাইসাখালী ইউপি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, পাথর উত্তোলনের কোন সরকারী ভাবে বৈধ কাগজ পত্র নেই। আমাদের পাথর ব্যবসায়ীদের একটি সমিতি আছে, সমিতির সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে আমরা পাথর উত্তোলন করে থাকি। তবে লকডাউনের কারণে পাথর গুলো কোথায়ও সরববরাহ করা যাচ্ছে না এবং কোন শ্রমিকও কাজে লাগাতে পারছিনা। পাথরগুলো যেখান থেকে তোলা হয়েছে, সেখানেই রয়েছে। লকডাউনের কারণে পাথরগুলো ট্রাকযোগে বাহিরে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
+ There are no comments
Add yours