আকাশ মার্মা মংসিং | বান্দরবান
বান্দরবানের থানচিতে বিভিন্ন অঞ্চলে খাল ও ঝিরি-ঝর্ণা থেকে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পানি প্রবাহের উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশংকা দেখা দিয়েছে। যার কারণেই শুষ্ক মৌসুম পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়ে থাকে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট চক্র সরকারী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনের কারণেই একদিকে বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে পাহাড়ী বিশাল জনগোষ্ঠি। উন্নয়ন কাজের ব্যবহার নামে এই সব বোল্ডার পাথর মেশিনে ভেঙ্গে কংক্রিট করে ছোট বড় ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট চক্র সরকারী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে থানচি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে পাচার করে যাচ্ছেন।
এদিকে পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুছ, কাজী নুরুল আনোয়ার, মো: জসিম উদ্দিন, মো: ইমরান হোসেন, মংক্যসিং মারমা (বিপ্লব মারমা) এই সিন্ডিকেট এর দলটি অবৈধ ভাবে থানচির বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পাথর উত্তোলন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের নীল দিগন্ত পর্যটন নিচে অনিল চাকমা পাড়া পাশ্বর্তী ঝিড়ি, দাকছৈ পাড়া ঝিড়ি, আলমারা পাড়া ঝিড়ি, শিলা ঝিড়ি, কনাজিও পাড়া ঝিড়ি, মগকক্রী ঝিড়ি। অনিল পাড়া দাকছৈ পাড়া ঝিড়ি হতে বলিপাড়া দাকছৈ পাড়া, শিলা ঝিড়ি থেকে মেনরোয়া পাড়া, হৈকো খুমী পাড়া, পর্দা ঝিড়ির হাবরু হেডম্যান পাড়া, বোর্ডিং পাড়া, চমি পাড়া, লাকপাইক্ষ্যং পাড়া এর খাওয়ার পানির উৎসব হতে পাথর উক্তোলন করছেন, পর্দা ঝিড়ির এর কাইতং পাড়া, কুংলা পাড়া সিংত্লাংপি পাড়া। এছাড়াও রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চয়ক্ষ্যং ঝিড়ি, সালোকক্যা ঝিড়ি, থাংদয় পাড়া ঝিড়ি, থেকে পাথর উক্তোলন করেন। থানচি সদর ইউনিয়নের শেরকর পাড়া ঝিড়ি, (তিন্দু ইউনিয়ন) চয়ক্ষ্যং ঝিড়ি হতে পাথর উক্তোলন করেছে এবং লিক্রে যাওয়ার নতুন সড়কে ৮ ও ৯ কিঃমিঃ মাঝখানে পার্শ্ব পাহাড়ে পাথর মজুদ করে রেখে পাথর পাচার করেন সিন্ডিকেট এর একটি দল।
এদিকে থানচির স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ বলেন, পরিবেশ আইনকে অমান্য করে একটি সিন্ডিকেট চক্র এ অবৈধ কাজে সক্রিয় রয়েছে। ঝিরি-ঝর্ণা থেকে নির্বিগ্নের পাথর উত্তোলনের কারনে ঐসব ঝিড়ির ও খালের পাথর শূন্য হয়ে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্য্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাহাড়ে ভাসমান আর কোনো পাথর নেই। এসব পাথর পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে পাথর আহরণ করা হচ্ছে। যার কারনে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে যারা পাথর উত্তোলন করেন তাদের কাছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা বৈধ কোনো কাগজপত্র আছে কি না তা সন্দেহ।
অপরদিকে পাথর উত্তোলনকারী আনোয়ার হোসেন স্বীকার করে বলেন, পাথর উত্তোলনের কোন সরকারী ভাবে বৈধ কাগজ পত্র নেই। আমাদের পাথর ব্যবসায়ীদের একটি সমিতি আছে। সমিতির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমরা পাথর উত্তোলন করে থাকি। তবে লকডাউনের কারণে পাথরগুলো কোথায়ও সরববরাহ করা যাচ্ছে না এবং কোন শ্রমিক ও কাজে লাগাতে পারছিনা। পাথরগুলো যেখান থেকে তোলা হয়েছে, সেখানেই রয়েছে। লকডাউনের কারণে পাথরগুলো বাইরে নেওয়া যাচ্ছে না।
থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা বলেন, বর্তমান সরকার সারাদেশের ন্যায় বান্দরবানেও ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে স্থানীয় পাথর ও বালু দিয়ে কাজ করার নিয়ম না থাকলেও উন্নয়নের দোয়াই দিয়ে থানচির বিভিন্ন ঝিরি-ঝর্ণা থেকে যেভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ভবিষৎতে পাহাড়ের দূর্গম এলাকার মানুষগুলো পানি পানি করে মারা যাবে। কারণ ঝিরি ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে ঝিরি-ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। যার কারণেই পাহাড়ের দূর্গম এলাকাগুলোতে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।অবৈধ ভাবে তারা পাথর উত্তোলন করছে। যার কারণে আজ প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্রীরুপ মজুমদার বলেন, পাথর একটি গুরুত্বপুর্ন প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এইটি আমাদের জনজীবনে প্রয়োজনও আছে। কেউ যদি অবৈধ পাথর আহরণ ও পরিবহন করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য এবং অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যারা পাথর উত্তোলন করছে তাদের সকল কাগজ পত্র যাচাই-বাচাই করে দেখবো। যদি অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে লকডাউনের পরে অভিযানে যাওয়ার কথাও জানালেন এই পরিবেশ কর্মকর্তা।
+ There are no comments
Add yours