আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দীর্ঘ কয়েকদিন ধরে জেরুজালেমের অলিতে গলিতে রাস্তায় ইসরায়েলি পুলিশ ও ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের মধ্যে রাত্রিকালীন সংঘর্ষ হচ্ছে। নতুন এ উত্তেজনা এরইমধ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে রকেট ছুড়েছে। আর গাজা লক্ষ্য করে কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
এদিকে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছ, পূর্ব জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বার বারই সহিংসতা হতে দেখা গেছে। তবে এ দফার উত্তেজনাকে উসকে দিয়েছে একটি উগ্রপন্থী ইসরায়েলি সংগঠন। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় তারা ওল্ড সিটিতে আরবদের মৃত্যু কামনা করে স্লোগান দিয়েছে।
ইসরায়েল সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে রমজান মাসে জেরুজালেমের ওল্ড সিটির দামেস্ক গেটে ব্যারিকেড দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনিরা ঐতিহ্যগতভাবে ইফতার শেষে এ স্থানটিতে জড়ো হয়ে থাকেন। জনপ্রিয় এ স্থানটি দখলের খবরে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসেন ফিলিস্তিনিরা। পুলিশ স্টান গান ও জল কামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীরে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ও বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপ করতে থাকে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। তীব্র প্রতিবাদের মুখে রবিবার (২৫ এপ্রিল) অবশেষে দামেস্ক গেট থেকে পিছু হটে ইসরায়েলি পুলিশ। সেখানে তাদের দেয়া ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়। আবার সমবেত হওয়ার আনন্দে রীতিমতো বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে ফিলিস্তিনিরা।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জেরুজালেমে সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিকে আরও উসকে দিয়েছে উগ্রপন্থী ইসরায়েলি সংগঠন লেহাভা। ফিলিস্তিনিরা যেখানে বিক্ষোভ করছিলো তার থেকে মাত্র কয়েকশ’ মিটার দূরে বিক্ষোভ করছিলো লেহাভার সদস্যরা। তাদের দাবি একটি টিকটক ভিডিও দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছে তারা; ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিরা ধর্মপ্রাণ ইহুদিদেরকে অনবরত চড় মারছে। অথচ এ সংগঠনটির নেতা হলেন প্রয়াত রাব্বি মীর কাহানের শিষ্য। এ কাহানই ফিলিস্তিনিদেরকে জোরপূর্বক জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত করার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) লেহাভার সদস্যরা স্লোগান দিচ্ছিলো ‘আরবদের মৃত্যু হয়েছে’ এবং আরবরা বিদায় হও।
এদিকে সম্প্রতি ইসরায়েল যেভাবে ধরপাকড় অভিযান জোরালো করেছে, তাতে ফিলিস্তিনিদের মনে আত্ঙ্ক তৈরি হয়েছে যে পূর্ব জেরুজালেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরালো করছে ইসরায়েল।
২৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি রামি বলেন, ‘আমরা চাই রাতের বেলা চা ও কফি খাওয়ার জন্য আমরা যেন দামেস্ক গেটের সিঁড়িতে বসতে পারি। এটা ওল্ড সিটির বাসিন্দাদের জন্য একটা ঐতিহ্য। নিজেদেরকে সতেজ রাখার জন্য তারা বাইরে যান। আমার আগে আমার বাবাও দামেস্ক গেটের সিঁড়িতে বসতেন। পুলিশ আসলে আমাদের পরিচয়কে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার পাশাপাশি পূর্ব জেরুজালেমও দখল করেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা ভবিষ্যত স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অংশ হিসেবে এ তিনটি এলাকার দাবি করে থাকে। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে দেখতে চায় তারা। অপরদিকে যুদ্ধের পর থেকে পূর্ব জেরুজালেমকে দখলে রেখেছে ইসরায়েল।
গোটা শহরটিকে রাজধানী ঘোষণা করে রেখেছে তারা। একইসঙ্গে ইহুদি মুসলিম, খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত এ স্থানটির পরিণতি কী হবে তা নির্ধারণ করাই মূলত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সঘাতের অন্যতম একটি কারণ। বেশ কয়েক বছর ধরে অসংখ্য সহিংস ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এ শহরটি।
+ There are no comments
Add yours