আজ ডে অফ,
ক্লাস, শুটিং, রিহার্সাল, নিউজ, কনফারেন্স, জুম মিটিং,কিচ্ছু নেই, কিন্তু এক গাদা হোম ওয়ার্ক পিছু ছাড়ছেনা। গত কয়েকমাস সাউন্ড স্লিপ শব্দ টা ভুলে গেছি। ছিড়ে পড়ে কই হারিয়ে গেছে শব্দ টা সেটা খোঁজার জন্য গত রাতেই তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে এলাম, কিন্তু বিধিবাম, সকাল টা ভাঙ্গলো ই একটা হাহাকারে। কেমন যেন শূন্য আমি।
আচ্ছা আমার সেই শৈশবের পশুর? ভালো আছে তো সে?? খরস্রোতা বয় এখনো??
বারান্দার গাছ গুলিকে আজ যত্ন করবার দিন। ওদের দিকে তাকালেই আমার চোখ ভিজে যায়। বার বার করে বাড়ির সামনের নিজের হাতে লাগানো গাছ গুলোর কথা মনে পড়ে। গন্ধরাজ, বেলি, গাদা আর ১০ টা বাজলেই না না রঙের বনফুল ফুটে উঠোন টা ভরে উঠতো। কি সুন্দর! কি সুন্দর সেই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য।
আচ্ছা, আমার সেই লম্বা লম্বা বাইন গাছ গুলো ভালো আছে? আমি গাছেই থাকতাম, সারদিন। স্কুল শেষ করে ই একটু খেয়ে উঠতাম গাছে, সেখানে বসেই হোম ওয়ার্ক করতাম, কবিতা লিখতাম, পাশের খালের জোয়ার ভাটা দেখতাম। বাইরে বের হলেই লোকের ইভ টিজিং, বুলিং আমায় ছিড়ে খুড়ে খেত, সেই ভয়েই কেমন যেন ওই গাছ গুলোই আমার একমাত্র বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। নিজের বাসায় বা জিনিসপত্র রাখায় যেন কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য গাছেই যত্ন করে অনেক কিছু থাকে থাকে সাজিয়ে নিয়েছিলাম। খালের ঠিক ওই পাড়েই টুম্পাদের বাড়ি, খাল পাড়ে বসে আমরা কত গল্প করতাম, খালে পানি না থাকলে কখনো কখনো ওপারেও যেতাম।
কাঁচা রাস্তা পার হলেই ধান ক্ষেতের আইল ধরে হেঁটে যেতাম অনেক দূর। আমরা খুব পরোপকারী ছিলাম। স্কুল পালিয়ে রাম্পাল, মিঠেখালি, আরো অনেক জায়গা সব নাম মনে নেই, সেখানে দেখতাম ছাগল অন্যের লাগানো শিম খেত, ওরা বেশি উপরে উঠে খেত পারত না। আমি, টুম্পা,নাসরিন, রাজু আমরা সেই শিম নিজ দায়িত্বে গাছ থেকে ছিড়ে ছাগলদের খেতে দিতাম। সাথে উপহার হিসেবে ভাগে পড়তো চাষীদের দৌড়ানী, আর পরের দিন ক্লাসে গেলে স্যারদের বকুনি আর মাইর, একটাও নিচে পড়তো না।
বড় হতে হতেই অবস্থা একটু একটু করে পালটানো শুরু হয়।
এখনো আছে? সেই কাঠের তক্তা পেটানো চেয়ার গাছের সাথে লাগানো??
সন্ধ্যা হলে মা আগে খুঁজতেন এ পাড়া সে পাড়া, এবাড়ি ও বাড়ি। কিন্তু কিছুদিন পরেই সে আমাকে আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন কোথায় থাকি আমি, তাই আর না ডেকে নিজেই হয়ত অপেক্ষা করতেন আমার নিজের ফেরার। এক টা সময় এমন লাগতে শুরু করছিল যে সাপের ভয় না থাকলে হ্যারিকেন টা নিয়ে রাতেও থেকে যেতাম সেখানেই। পড়তে পড়তে না হয় সেখানেই ঘুমিয়ে যেতাম।
আচ্ছা মা সে কেমন আছে? যদিও ফোনের কথায় মায়ের গলার কন্ঠের অনেক পরিবর্তন বুঝতে পারি। ভিডিও কলে হয়ত কাচাপাকা চুল গুলো দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই চুলের একটা চেনা ঘ্রাণ আছে, আমার নাকে লেগে থাকে, কোথাও পাইনা সেই ঘ্রাণ।
মায়ের শরীরে একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ আমার নাকে আজো পাই আমি। মাঝে মাঝে আমার ঘুমের ঘরে মনে হয় একটা প্রচন্ড ঘ্র্বাণ আমাকে জাগিয়ে দেয়, ঘুম ভেংগে পাগলের মত খুজি আমি, নাই বাস্তবে নেই কোথাও।
ইদ আসলে সকালবেলা মা ডেকে তুলতেন, মায়ের হাতে স্পেশাল শরবত যেটাকে আমরা মলিদা বলি।
আদা,নারিকেল,মুড়ি চালের গুড়ার মিশ্রণে এক অদ্ভুত মজার রেসিপি। ইউটিউবের কল্যাণে কয়েকবার করেছিলাম,কিন্তু মায়ের হাতের সেই স্বাদ কই পাই?? নাই, নাই কিচ্ছু নাই।
লেখক: নিউজ প্রেজেন্টার, বৈশাখী টেলিভিশন।
+ There are no comments
Add yours