আমির হোসেন, ঝালকাঠি:
ঝালকাঠিতে ঘুর্ণিঝড় ‘ইয়াস’, পূর্ণিমার জোয়ার ও চন্দ্রগ্রহনের প্রভাবে ব্যাপক পানি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিষখালি,সুগন্ধা ও খয়রাত নদীর বেশ কিছু যায়গায় বেড়িবাধ না থাকায় পানি ঢুকে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভেসে গেছে শতশত পুকুরের মাছ।
স্থানীয়রা জানায়, বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৩ দিন থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া, পালট, নিজামিয়া, চরপালট আবাসন, উত্তমপুর, বাদুরতলা, মানকিসুন্দর, নাপিতের হাট, ডহরশংকর, মঠবাড়ি এলাকায় জোয়ারের পানি ডুকে পরেছে। রাতের জোয়ারে পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় বেড়িবাঁধ না থাকায় বিষখালী নদীর তীরবর্তী হাজারো মানুষ এখন আতঙ্কে রয়েছে।
রাজাপুর উপজেলা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোজ্জামেল হক জানায়, পানি বৃদ্ধি কারনে দুই শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষির আশঙ্কা করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, যাদের ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নলছিটি উপজেলার পুরাণ বাজার, সিকদার পাড়া, মালিপুর, নাঙ্গুলি, চর বহরমপুর, সড়ই, কুশাংগল, সিদ্ধকাঠি, মোল্লারহাট, সুবিদপুর সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতেকরে ফসল ও ঘেড়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কাঁঠালিয়া ও ঝালকাঠি সদরেও বণ্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মোঃ জেহর আলী বিভিন্ন দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে সিয়াম ৮ বছর ও সামিয়া আক্তার ৪ বছর বয়সী দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মেডিকেল মোড় সংলগ্ন ও বড়ইয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শিশু শিক্ষার্থী মো. সিয়াম হোসেন উপজেলার পিংড়ি গ্রামের মো. ফারুক হাওলাদারের ছেলে ও আযীযিয়া নূরাণী কিন্ডারগার্টেন মাদ্রাসার ২য় শ্রেনীর ছাত্র।
সিয়ামের বাবা মো. ফারুক হাওলাদার জানায়, ব্যবসার কারনেই মেডিকেল মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। বুধবার সকাল থেকেই পাশের কোলায় (মাঠ) সহপাঠীদের সাথে খেলা করছিল। দুপুর থেকে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজাখুজির এক পর্যয়ে কোলার মধ্যের পুকুরে ভাসা অবস্থায় পাওয়া যায়। উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষনা করে।
এবং এদিকে বড়ইয়া নিহত শিশু সামিয়া আক্তার ঐ এলাকার মো. সাইলু আকনের মেয়ে। শিশুটির পরিবার জানায, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বিষখালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। বেড়িবাধ না থাকায় প্লাবিত হয় লোকালয়। এতে সাইফুলের ঘর পানিতে ডুবে যায়।
সাইফুল ঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে প্রতিবেশী মোশারেফের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ঐ বাড়ির সামনের খালের পাড়ে বসে শিশুটি বন্যার পানিতে খেলা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরে তাকে খোজাঁখুজি করে সন্ধ্যার দিকে ঐ খালে ভাসতে দেখে স্বজনরা শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষনা করে।
রাজাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম জানান, শিশু সিয়ামের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এবং শিশু সামিয়া আক্তার নিহত খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। পরিবারের সাথে কথা বলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
+ There are no comments
Add yours