ইসমাইলুল করিম নিরব:
বান্দরবানের লামায় চাম্পাতলীতে তালা-বদ্ধ বাসা থেকে শিশুকন্যা’সহ তিনজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এবার প্রবাসী নুর মোহাম্মদের দু’ভাই আব্দুল খালেক ও শাহ আলমকে ৩দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শনিবার (২৯ মে২১ইং) দুপুরের পর লামার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমানের আদালতে হাজির করে তাদের ৭দিন করে রিমান্ড আবেদন করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে আদালত শুনানী শেষে তাদের দু’জনের ৩দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান এই খবর নিশ্চিত করেন।
এদিকে একই ঘটনায় প্রবাসী নূর মোহাম্মদ এবং তার পরিবারের ৬সদস্য’সহ মোট এগারজনকে পুলিশী হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এর মধ্যে রিমান্ডে ঐ দুই ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য স্বজনরাও রয়েছেন। একইভাবে প্রতিবেশি যুবক আব্দুল মান্নান, মসজিদে তারাবি পড়ানো হাফেজ সাইদুর রহমান এবং তার ভাই দুদিন ধরে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। এর আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত বুধবার থেকে কারাগারে আছে স্থানীয় যুবক উত্তম বড়ুয়া। যদিও ২১ মে২১ইং দিনগত রাতে বদ্ধ বাসা থেকে দু’কন্যাসহ মায়ের মরদেহ উদ্ধারের পরপরই প্রবাসী নুর মোহাম্মদের দু’ভাই আব্দুল খালেক, শাহ আলম, মৃত মাজেদার ভগ্নিপতি আব্দুর রহিম ও তার স্ত্রী রাহেলা বেগমকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে মুচলেকায় মুক্তি দেওয়া হয়।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সংবাদকর্মীদে কে বলেন, এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত প্রবাসী নুর মোহাম্মদ’সহ মোট ১৩ সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আগের একজনসহ এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এই ঘটনায় ছায়া তদন্তে থাকা র্যাবের একটি সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী মসজিদে গেল রমজানে তারাবির নামাজ পড়ানো হাফেজ সাইদুর রহমান এর ১২৭টি কল পাওয়া গেছে মৃত মাজেদা বেগমের গ্রামীণ নাম্বারে। যে কলগুলো ৫, ১০ কিংবা ১৫ মিনিটের দীর্ঘ ফোনালাপ। এই কল করা নিয়ে প্রবাসী নূর মোহাম্মদেরও ছিলো বিস্তর অভিযোগ। কল করে স্ত্রী ও কন্যাদেরকে বিরক্ত করার কারণে এই হাফেজকে সাইদুর রহমান প্রবাস থেকেই ফোন করে বেশ কয়েকবার শাসিয়েছেন নুর মোহাম্মদ।
তবে মামলার তদন্তকাজে সহযোগী লামা থানা পুলিশের এক এসআই নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, যে বদ্ধ বাসা থেকে দু’কন্যা সহ প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই বাসার মাত্র ২০ গজের মধ্যে দক্ষিণে প্রতিবেশী প্রমদ বড়ুয়া বাসায়। পশ্চিমে নুর মোহাম্মদের কোল ঘেঁষে দু’ভাই আব্দুল খালেক এবং শাহ আলমের টিনশেড বাসা। উত্তরেও আরেক প্রতিবেশি এবং পূর্বদিকে চাম্পাতলীর প্রধান সড়ক। এমন একটি জায়গায় কোনো ধরণের আওয়াজ ছাড়া এধরণের ঘটনা ঘটিয়ে অপরাধীরা নিরাপদে চলে যাওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে পুলিশকে। কেউ কি টের পাননি? নাকি গোলযোগ টের পেয়েও এগিয়ে আসেন নি। এই খুনের পেছনে প্রতিবেশিদের কারো হাত নেই তো! প্রশ্ন পুলিশের এই উপ পরিদর্শকের।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব পরিচিত খুনিরা ঘরে ঢুকেই ছোট্ট বাচ্চাটিকে ছিনিয়ে নিয়ে প্রথমেই মা ও বোনকে জিম্মি করে ফেলে। আর ওই জিম্মি অবস্থাতেই দু’জনকে হত্যা। যেহেতু কন্যা সুমাইয়া ইয়াছমিন প্রকাশ রাফির মরদেহ খাটের উপর এবং মা মাজেদা বেগমের মরদেহ একই কক্ষে খাটের নিচে মেঝেতে পড়ে ছিলো। আর ১০ মাসের ছোট্ট শিশু নূরীর মরদেহ ছিলো অন্য একটি কক্ষের দরজার সামনে। তাছাড়া মৃত মাজেদা বেগমের মুখের একপাশে বড় ছোট কামড়ের দাগ। খামচিতে ক্ষত-বিক্ষত পুরো মুখ মন্ডল ও শরীর। একইভাবে ক্ষত-বিক্ষত এসএসসি পড়ুয়া রাফির মুখমন্ডল ও শরীর। দু’জনের শরীরেই স্পষ্ট ধর্ষণের আলামত।
উল্লেখ্য, গত ২০ মে (শুক্রবার) দিনগত রাত তিনটার দিকে লামা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের চাম্পাতলী গ্রামের তালাবব্ধ বাসা থেকে প্রবাসী নুর মোহাম্মদের দু’কন্যা নুর-এ জান্নাত রীদা প্রকাশ নুরী (১০) ও সুমাইয়া ইয়াছমিন প্রকাশ রাফি (১৬) এবং স্ত্রী মাজেদা বেগম (৩৭) এর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদের মধ্যে প্রবাসীর কন্যা রাফি ও তার মা মাজেদা বেগম এর শরীরে ধর্ষণের আলামত রয়েছে। একইভাবে তাদের তিন জনের শরীর, কপাল, পিঠ ও বুকে রক্তাক্ত জখমের চিত্র। এই ঘটনায় মৃত মাজেদা বেগমের মা লাল মতি বেগম বাদী হয়ে ২১ মে (শনিবার) লামা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
+ There are no comments
Add yours